আমি ব্লগ লেখার খুব বেশি সমর্থক কোনওদিনও ছিলাম না, সত্যি কথা বলতে কি এখনও যে আছি তা নয় । তার একটা প্রধান কারণ আমার ধারণা ব্লগ লেখার থেকেও পড়া অনেক বেশি ক্লান্তিকর । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময়ই পড়তে শুরু করে শেষ করা হয়ে ওঠে না । নিজের ধৈর্য এবং/অথবা আগ্রহের অভাবকে 'ঠিক আছে, বাকিটা পরে পড়ব' জাতীয় অজুহাত দিয়ে ঢেকে দিই - আর আমরা সবাই জানি সেই 'পরে' টা আর কখনওই আসে না । তো, এই কারণে আমি ঠিক করেছি আমার ব্লগকে কখনওই অন্যের ক্লান্তির কারণ ঘটাব না, আমার ব্লগের বিষয় হবে প্রধানতঃ ভ্রমণ । আমার মতো যেসব বাঙালিরা ঘুরতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ব্লগ হবে তথ্যের একটা উৎস । আমার নিজের একটা অভ্যেস আছে, কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গাটা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি, আর ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে আমার বরাবরই মনে হয়েছে যে ইন্টারনেটে লেখালেখি করার ব্যাপারে বাঙালিদের থেকে কুঁড়ে খুব কম শিক্ষিত জাতই আছে । আমার মতো যেসব বাঙালিরা আছে, যারা ইন্টারনেটে কোনো একটা ইংরিজীতে লেখা দেখলেই না পড়ার চেষ্টা করে, তাদের জন্য আমার ব্লগ সহায়ক হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে শুরু করছি আমার ভ্রমণকাহিনী । আগেই বলে রাখি, আমি স্ট্যাটিসটিক্সের ছাত্র ছিলাম, তাই আমার ব্লগে তত্ত্বের থেকে তথ্যের দেখাই মিলবে বেশি ।

Monday, January 27, 2014

দার্জিলিঙ ভ্রমণ

গেই বলেছি, দী-পু-দা সম্পর্কে আমার ভ্রমণসর্বস্ব ব্লগ মূলতঃ নীরবতাই পালন করবে । সেই সূত্র ধরেই এবারের দার্জিলিঙ ভ্রমণ এক নাতিদীর্ঘ শুধুমাত্র তথ্যসমৃদ্ধ রচনায় পরিণত হতে চলেছে । ভাষার এই গাম্ভীর্য্যের কারণ ? সম্প্রতি আমার জনৈকা পাঠিকা আমাকে এক বাজারচলতি পত্রিকায় একটি ভ্রমণকাহিনী পড়িয়ে বলেছেন "তুমি এ'রকম ভাষায় লিখতে পারো না ?" বলা বাহুল্য, সে'ভাষা এরকমই অ-চলিত । একটা পূর্ণদৈর্ঘ্যের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতাকে এই ভাষায় মুখর করে তোলা আমার মতো অপটু লেখকের কাছে শুধু পরিশ্রমসাপেক্ষই নয়, ক্লান্তিকরও বটে - তাই এই সংক্ষিপ্ত রচনায় আমার এই 'ছোট্ট' প্রয়াস ।

যাওয়া ঃ ২২শে জানুয়ারী, ২০১৪ রাত ৯:৪০ - কলকাতা ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক ট্রেন) ।
ফেরা ঃ ২৬শে জানুয়ারী, ২০১৪ বিকেল ৫:৪০ - উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ।

আমাদের দলে আমি, আমার স্ত্রী অমৃতা, তার কলিগ্‌ নন্দিনীদি, দীপঙ্করদা আর ওঁদের যমজ ছেলে সায়ক ও সৌনক ।

সারসংক্ষেপঃ

১. দার্জিলিঙ-এর মরশুম প্রধানতঃ মে-জুন মাস বা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস । সেই অর্থে জানুয়ারী মাস মন্দা-মরশুম । আর সেই কারণেই আমরা বিভিন্নরকম ক্ষেত্রে বেশ কিছু আর্থিক ছাড় পেয়েছি ।
২. আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন 'নিউ সিকিম ট্রাভেল' থেকে প্যাকেজ গাড়ি নিয়েছিলাম । এই গাড়ি আমাদের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিঙ পৌঁছে দেওয়া, দার্জিলিঙ-এর আশপাশ ঘোরা আর দার্জিলিঙ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে দেওয়া - পুরোটার জন্য মোট ৬,৫০০ টাকা নিয়েছে ।
৩. আমরা ছিলাম 'বেলভিউ হোটেল'-এ । বেলভিউ দার্জিলিঙ এর সর্ব্বোত্তম হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম । এখানকার যে ঘরগুলো মরশুমে ২,০০০ টাকা ভাড়া - সেগুলো আমরা পেয়েছি ১,৪০০ টাকায় । বেলভিউ হোটেলের ওয়েবসাইট http://www.bellevuehotel-darjeeling.com/ এবং ফোনে যোগাযোগ করার উপায় - Tashi Pulger - 9800667148.
৪. দার্জিলিঙ-এর আশেপাশে ঘোরার জন্য অনেকগুলো জায়গা থাকলেও মূলতঃ দেখার জায়গা টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, চিড়িয়াখানা আর রোপওয়ে । কোনও কারণেই এরমধ্যে কোনওটা বাদ দেওয়ার মানে হয় না ।
৫. আমার মতে দার্জিলিঙ-এর সবথেকে বড় আকর্ষণ দু'টো - টয়ট্রেন (দার্জিলিঙ-হিমালয়ান রেলওয়ে) আর ম্যাল । (কাঞ্চনজঙ্ঘা লিখলাম না, কারণ কাঞ্চনজঙ্ঘা দার্জিলিঙ ছাড়াও অন্য জায়গা থেকে দেখা যায়) এদের মধ্যে ম্যালে সবসময়েই যাওয়া যায়, কিন্তু সবসময়ে পাওয়া যায় না টয়ট্রেনের দেখা । আমরা সৌভাগ্যবান - আমরা ১৩৩ বছরের প্রাচীন এই ঐতিহ্যে সামিল হতে পেরেছি ।
৬. নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিঙ পর্যন্ত টয়ট্রেনের পরিশেবা বর্তমানে বন্ধ আছে - এখন দার্জিলিঙ থেকে কার্সিয়াং পর্যন্ত ট্রেনে যাওয়া যায় । এছাড়া দার্জিলিঙ-ঘুম-দার্জিলিঙ এ একটা ট্রেন চলে যার নাম জয় ট্রিপ । https://www.irctc.co.in/ থেকে দার্জিলিঙ-হিমালয়ান রেলওয়ের টিকিট কাটা যায় ।
৭. ম্যাল থেকে মিনিটসাতেকের হাঁটা পথে দার্জিলিঙ-এর এক বিখ্যাত রেস্ট্যুরেন্ট কেভেন্টার্স । এখানকার খাবার যে খুব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তা নয় - কেভেন্টার্সে পাওয়া যায় এরকম সব খাবারই অন্যান্য জায়গায় লভ্য । এখানকার মূল আকর্ষণ হল এর ছাদে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে খাবার খাওয়া । কেভেন্টার্স ১০০ বছরের পুরোনো দোকান এবং সত্যজিৎ রায়ের একাধিক লেখায় এর উল্লেখ পাওয়া যায় । 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' ছবির শ্যুটিং-এর সময়ে এখানে সত্যজিৎ রায় এসেছিলেন - সেই ছবি কেভেন্টার্সের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে ।
৮. দার্জিলিঙ-এ দুপুরের বা রাতের খাওয়ার জন্য অনেক ছোটোখাটো হোটেল আছে, কিন্তু সবথেকে ভালো রেস্ট্যুরেন্ট হল - গ্লেনারিজ । ম্যাল থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা দূরত্বে এই রেস্ট্যুরেন্টের খাবার নিঃসন্দেহে খুব ভালো কিন্তু যেটা একেবারেই সন্তোষজনক নয় সেটা হল এদের পরিশেবা । এরা অর্ডার নিতে দেরি করে - আর সেই দেরি করার প্রথাটা বজায় রাখে একেবারে বিল দেওয়া পর্যন্ত ! মাঝখানের কথা আর নাই বা উল্লেখ করলাম ।

উপসংহারঃ

টয়ট্রেন থেকে দার্জিলিঙ শহর
বাংলার তথা ভারতের সবচেয়ে পুরনো শৈলশহরগুলো মধ্যে দার্জিলিঙ বিশেষ উল্লেখযোগ্য । দু'শো বছরের শাসনকালের মধ্যে ইংরেজরা ভারতে অনেক ভালো কাজও করেছিল - তাদের মধ্যে একটা হল এই পর্যটনকেন্দ্রটি নির্মাণ করা । ম্যাল অক্সফোর্ড টয়ট্রেন কেভেন্টার্স কাঞ্চনজঙ্ঘা - এইসব মিলিয়ে দার্জিলিঙের ঐতিহ্যগত গুরুত্ব অপরিসীম । দার্জিলিঙে যেতে হলে মরশুমে না যাওয়াই ভাল, তাতে অবাঞ্ছিত ভীড়ের কবলে পড়তে হয় না । পর্যটকের ভীড়, দোকানদারদের ডাকাডাকি, হোটেলওয়ালা আর গাড়িওয়ালাদের হাত ধরে টানাটানি সহ্য করার সহিষ্ণুতা যদি না থাকে তাহলে তাহলে ডিসেম্বর-জানুয়ারী হল দার্জিলিঙ যাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে উপযোগী সময় । যদি আয়েস করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাত হাজার ফুটেরও বেশি ওপরে এই প্রাচীন শহরটি সেই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে - বিশ্বাস রাখি !

দার্জিলিঙের আরও ছবি দেখতে হলে click here.

No comments:

Post a Comment