বিশেষ সতর্কীকরণঃ
১. এই ভ্রমণে আমরা জনবহুল স্থানে, বিশেষতঃ স্টেশনে, ট্রেনে ইত্যাদি জায়গায় সারাক্ষণ মাস্ক পরে থেকেছি এবং দূরত্ববিধি যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করেছি। সেইসঙ্গে প্রয়োজনমতো হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করেছি।
২. এই পুরো ভ্রমণে আমরা কোনও অবস্থাতেই কোনও পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার করিনি। অর্থাৎ প্লাস্টিকের ব্যবহার না করেও এই ভ্রমণ অনায়াসে করা যায়।
৩. এই পুরো ভ্রমণে আমরা কোনও কাগজ ব্যবহার বা নষ্ট করিনি। হোটেল বুকিং-এর রশিদ-এর প্রিন্ট আউট ব্যবহারের কোনও প্রয়োজন হয় না।
৪. এই পুরো ভ্রমণে আমাদের দলের কেউ ধূমপান করেনি। ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
আমার ব্লগের সমস্ত পাঠকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে করোনা ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করার জন্য সরকারী বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য। সেইসঙ্গে অনুরোধ করছি প্লাস্টিক, অপ্রয়োজনীয় কাগজের ব্যবহার আর ধূমপান বর্জন করার জন্য।
ভ্রমণপথঃ
শনিবার ৩০শে অক্টোবর, ২০২১ঃ শালিমার স্টেশন থেকে সকাল ৭ঃ৪৫ মিনিটে শালিমার ভজুডিহি স্পেশাল ট্রেন - সকাল ১১ঃ১০ মিনিটে বিষ্ণুপুর। একইসঙ্গে গাড়িতে সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে শালিমার স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুর ১২ টায় বিষ্ণুপুর। বিষ্ণুপুরে রাত্রিবাস।
রবিবার ৩১শে অক্টোবর, ২০২১ঃ বিষ্ণুপুরে লোক্যাল সাইট সিয়িং। বিষ্ণুপুরে রাত্রিবাস।
সোমবার ১লা নভেম্বর, ২০২১ঃ বিষ্ণুপুর থেকে দুপুর ৩ঃ২২ মিনিটে ভজুডিহি শালিমার স্পেশাল ট্রেন - সন্ধ্যে ৭ টায় শালিমার। একইসঙ্গে গাড়িতে দুপুর ১ঃ৪০ মিনিটে বিষ্ণুপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যে ৬ঃ৪৫ মিনিটে শালিমার স্টেশন।
বিষ্ণুপুর। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মোটামুটি পশ্চিমদিকে অবস্থিত বাঁকুড়া জেলার সদর এই শহর মূলতঃ পোড়ামাটির কাজ বা টেরাকোটার জন্য বিখ্যাত। রয়েছে ডজনখানেকের বেশি মন্দির যার সবগুলোই এই পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি। সতেরোশো আর আঠারোশো খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে মল্লরাজাদের আমলে এইসব মন্দিরগুলো তৈরি করা হয় (আমি অবশ্য এই মল্লরাজাদের নাম বিষ্ণুপুর যাওয়ার আগে কখনও শুনিনি)। পোড়ামাটির তৈরি এই মন্দিরগুলো দেখার জন্যই আমাদের এবারের ভ্রমণ।
বিষ্ণুপুর ট্যুরিজম প্রপার্টির সামনে আমরা |
আমাদের ঘর |
আমরা ঘরে ঢুকে স্নানটান সেরে নিলাম। তারপর হোটেলের ডাইনিং রুমে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। ভাত ডাল আলুভাজা মাছ চিকেন নিয়ে খরচ হল ১,২২৪/- টাকা (সার্ভিস ট্যাক্স যোগ করে)। এখানে বলে রাখি থাকার জন্য বিষ্ণুপুর ট্যুরিজম প্রপার্টি রেকমেন্ড করলেও খাওয়ার জন্য এই জায়গাটা আমি একেবারেই রেকমেন্ড করব না। বিষ্ণুপুর ট্যুরিজম প্রপার্টির রান্নার মান খুবই সাধারণ আর দাম একটু বেশির দিকেই।
ব্যালকনি থেকে রিসর্টের ভিতরের পার্ক |
খাওয়ার পরে আমরা ঘরে এসে বিশ্রাম করলাম। ঘরগুলোর লাগোয়া একটা করে ছোট ব্যালকনি আছে, যেখান থেকে রিসর্টের ভিতরের পার্কটা খুব সুন্দরভাবে দেখা যায়। এখানে পার্কটা খুব সুন্দরভাবে সাজানো, একটা দোলনাও আছে। বিকেলে কিছুক্ষণ পার্কে সবাইমিলে ঘোরাঘুরি করা হল। রাতের দিকে এখানে হাল্কা একটা ঠান্ডাভাব অনুভব করা যায় কারণ এখানকার তাপমাত্রা কলকাতার থেকে সামান্য হলেও কম। রাত্রিবেলা এখান থেকেই ভাত ডাল ডিম আর মাছ দিয়ে ডিনার করা হল। খরচ হল ৬৯৫/- টাকা (মা আর সোনামাসি কিছুই খায়নি)।
বিষ্ণুপুরের দেওয়ালে বিষ্ণুপুরের ম্যাপ |
রাসমঞ্চ - বিষ্ণুপুর ট্যুরিজম প্রপার্টি থেকে মিনিট তিনেক হাঁটাপথে আমাদের প্রথম গন্তব্য রাসমঞ্চ। এই রাসমঞ্চ বিষ্ণুপুরের অন্যতম বিখ্যাত দর্শনীয় জায়গা - বিষ্ণুপুরের পরিচায়ক বলা যেতে পারে। বিষ্ণুপুরের প্রায় সব মন্দিরই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করে । এখানে ঢোকার সময়ে টিকিট কাটতে হয়, মাথাপিছু ২০/- টাকা (১৪ বছরের নিচে লাগে না)। টিকিটের কোনও কাউন্টার নেই, মোবাইলের সাহায্যে কিউআর কোড স্ক্যান করে টিকিট কাটতে হয়। কাটা হয়ে গেলে মোবাইলে একটা পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড হয়ে যায় আর সেটাই ঢোকার সময়ে গেটে দেখাতে হয়। দেখানো হয়ে গেলেই কিন্তু ফাইলটা ডিলিট করা চলবে না কারণ এই একই টিকিটে শ্যামরায় মন্দির আর জোড়বাংলা মন্দির দেখা যাবে। অর্থাৎ বাই ওয়ান গেট টু অফার !
রাসমঞ্চ |
শ্যামরায় মন্দির |
গুমঘর বা গুমগড় - শ্যামরায় মন্দির থেকে বেরিয়ে জোড়বাংলা মন্দিরের দিকে যাওয়ার পথে এই গুমঘর বা গুমগড় দেখতে পাওয়া যায়। এটা একটা চারদিক উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা জায়গা। অনেকের মতে অপরাধীদের এর মধ্যে ফেলে দিয়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হত। কেউ কেউ মনে করেন এটা মল্লরাজাদের শস্যাগার ছিল। আবার কাছাকাছির মধ্যে কিছু পোড়ামাটির জলের পাইপ দেখা যায় বলে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন এটা আসলে জলাধার ছিল।
মহাপ্রভু জীউ-এর মন্দির |
জোড়বাংলা মন্দির |
এই জোড়বাংলা মন্দিরের একেবারে পাশেই রয়েছে আরও অনেকগুলো দর্শনীয় জায়গা যেগুলো আমরা পরপর দেখলাম।
রাধেশ্যাম মন্দির |
মৃন্ময়ী মন্দির |
মৃন্ময়ী মন্দির থেকে বেরিয়ে পাশেই একটা দোকান থেকে আমরা লেবুর সরবত খেলাম। সময়টা অক্টোবর মাসের শেষ হলেও দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপরে তখন গরম বেশ ভালোই লাগে। আর এই গরমে হাল্কা ঠান্ডা লেবুর সরবতও ভালো লাগে। আমি দু'গ্লাস খেয়ে ফেললাম।
রাজবাড়ি - মৃন্ময়ী মন্দির থেকে বেরিয়েই দেখতে পাওয়া যায় রাজবাড়ি - প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। আর তারই লাগোয়া নতুন বাড়ি। এখানে রাজপরিবারের মানুষজন এখনও বাস করেন। পুরো জায়গাটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা আর সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে 'প্রবেশ নিষেধ' (সেটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে যাঁরা এখানে বাস করেন তাঁরা কেউ রাজা নন, আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ। বাইরের যেকোনও লোক যদি যখন তখন আমাদের বাড়িতে এসে বাড়িটা ঘুরে দেখতে চায়, সেটা আমাদের কাছে যথেষ্ট বিরক্তি উদ্রেককারী বিষয় হবে না কি ?)।
লালজী মন্দির |
বড় পাথর দরজা |
বড় পাথর দরজা - লালজী মন্দির থেকে বাইরে বেরিয়ে সামান্য এগোলেই দেখা যায় বড় পাথর দরজা। এই দরজাই ছিল বিষ্ণুপুরের প্রাচীন দূর্গের উত্তরদিকের প্রবেশপথ। এখানে দ্বাররক্ষী সৈন্যদের অস্ত্র নিয়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা ছিল।
ছোট পাথর দরজা |
পাথর দরজার এলাকা |
আগেই বলেছি দেখার জায়গাগুলোকে দুটো দলে ভাগ করা যায়। ছোট পাথর দরজা দেখার পর আমাদের একটা দলের প্রায় সবকটা জায়গা দেখা হয়ে গেল (বাকি রইল শুধু পাথরের রথ, যেটা আমরা পরেরদিন দেখেছি), তাই আমরা একটা টোটো করে হোটেলে ফিরে এলাম।
হোটেলে চানটান করে আমরা বেরোলাম লাঞ্চ করতে। এখানে দুপুরে খাওয়ার হোটেল অনেক আছে, সেরকমই একটা হোটেল থেকে ভাত মাছ চিকেন ডিম বিরিয়ানি খেয়ে নেওয়া হল। খরচ হল ৬৪০/- টাকা।
খাওয়ার পরে আমরা বেরোলাম বিষ্ণুপুরের অন্যদিকটা দেখতে। এবারে আর পদব্রজে নয় - গাড়ি নিয়ে।
রাধামাধব মন্দির |
কালাচাঁদ মন্দির |
এখানে একটা দরকারী তথ্য দিয়ে রাখি। এই মন্দিরগুলোর যিনি সিকিউরিটি গার্ড, তিনি আমাদের ডেকে বললেন আমরা যেন মন্দির সংলগ্ন মাঠ দিয়ে হাঁটাচলা যতদূর সম্ভব না করার চেষ্টা করি। আমি ভাবছিলাম হাঁটাচলার কারণে মাঠের ঘাস এবং ফুলগাছের ক্ষতি হতে পারে বলে কথাগুলো উনি বলছেন কিন্তু আসলে তা নয়। ভদ্রলোক বললেন - এখানে মাঠের এখানেওখানে, ঝোপঝাড়ের মধ্যে অনেক সাপ আছে। প্রকৃতপক্ষে এত গাছপালা, ইঁটের তৈরি মন্দির, কাছাকাছির মধ্যে জলাশয় এইসবকিছুর উপস্থিতির কারণে এখানে সাপ না থাকাটাই অস্বাভাবিক। ইঁদুর আর ব্যাঙের প্রাচুর্য্যও সাপ থাকার আরেকটা কারণ।এ'দিন সকালবেলাই ওই মাঠের মধ্যে একটা প্রায় ছ'ফুট লম্বা সাপের খোলস পাওয়া গেছে (উনি নিজের মোবাইলে সেটার ছবিও দেখালেন আমাদের)। আর এই তথ্যটা শুধু কালাচাঁদের মন্দিরে নয়, বিষ্ণুপুরের যেকোনও মন্দিরের জন্যই সত্য।
রাধামাধব আর কালাচাঁদের মন্দিরদুটোই আমাদের হোটেল থেকে সবথেকে বেশি দূরে তাই আগেই ওখানে চলে গিয়েছিলাম। এবার ফিরতি পথে বাকি দেখার জায়গাগুলো দেখে নিলাম।
রাধাগোবিন্দ মন্দির |
নন্দলাল মন্দির |
জোড় মন্দির - নন্দলাল মন্দির থেকে সামান্য এগিয়ে বাঁদিকে জোড় মন্দির। মল্লরাজ গোপাল সিংহ ১৭২৬ খ্রীষ্টাব্দে এই মন্দির তৈরি করেন। দুটো বড় আকারের আর একটা ছোট আকারের মন্দির নিয়ে এই জায়গাটার নাম হয়েছে জোড় মন্দির।
ছিন্নমস্তা মন্দির |
দলমাদল কামান |
আমাদের বিষ্ণুপুর ভ্রমণ মোটামুটি শেষ - অন্ততঃ আমাদের হোটেলের কাছাকাছি যে জায়গাগুলো আছে সেগুলো সবই দেখা হয়ে গেছে। যে দুটো জায়গা বাকি রয়েছে, সেগুলো আমরা পরেরদিনের জন্য রেখে দিলাম।
তাঁতীর বাড়িতে তাঁতযন্ত্রে বালুচরী শাড়ী বোনা |
রাতে হোটেলের বাইরে গিয়ে ডিনার করলাম (মা আর সোনামাসি আবার কিছু খেল না)। খরচ হল ২৬৬/- টাকা।
পরেরদিন ১লা নভেম্বর, ২০২১ - আমাদের ফেরার দিন। সকালে হোটেলের বাইরে থেকে ব্রেকফাস্ট করে ঘরে এসে চানটান করে হোটেল থেকে চেক্আউট করলাম। এখানে চেক্আউটের সময় সকাল ১১টা। হোটেলের ঘরভাড়া আমরা বুকিং-এর সময়ে দিয়ে থাকলেও এখানে ঘরভাড়ার উপর ১২% জিএসটি নেয়, যেটা চেক্আউটের সময়ে দিতে হল। হোটেল থেকে বেরিয়ে আমরা প্রথমে গেলাম আমাদের বাকি থাকা দ্রষ্টব্য জায়গাগুলো দেখে ফেলতে।
মদনমোহন মন্দিরটা আমাদের হোটেল থেকে তুলনামূলকভাবে দূরে আর এখানে যাওয়ার রাস্তাটাও চরম সরু। যাওয়ার পথে বাজার গরু বস্তি - সবই পড়ে। গাড়ির চালকের আসনে বিশেষ সুদক্ষ ড্রাইভার না থাকলে এই মন্দির দেখতে যাওয়া জন্য টোটোই ভাল।
মদনমোহন মন্দির |
পাথরের রথ |
বিষ্ণুপুর দর্শন শেষ। দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। আমরা এবার রওনা দিলাম স্টেশনের দিকে। বাবাকে স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আমরা গাড়ি নিয়ে ফেরার পথ ধরব।
স্টেশন সংলগ্ন একটা ভাতের হোটেল থেকে দুপুরের খাবার সেরে নেওয়া হল। তারপর বাবা চলে গেল প্ল্যাটফর্মের দিকে আর আমরা এগোলাম কলকাতার দিকে। ফেরার পথে সোনামাসিকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আবার গেলাম শালিমার স্টেশন। সেখান থেকে বাবাকে নিয়ে বাড়ি !
সারসংক্ষেপঃ
১. কলকাতা থেকে সড়কপথে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক শহর বিষ্ণুপুর। বিভিন্ন মল্লরাজাদের আমলে তৈরি পোড়ামাটির মন্দিরগুলি এখানকার প্রধান আকর্ষণ।
২. কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুর গাড়ি নিয়ে গেলে ডানকুনি থেকে প্রথমে এস এইচ পনেরো ও তারপরে এস এইচ দুই ধরে যেতে হয়। ট্রেনে গেলে হাওড়া বা সাঁত্রাগাছি থেকে বিষ্ণুপুরের যাওয়া যায়।
৩. বিষ্ণুপুরে বেশ কিছু হোটেল আছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগের বিষ্ণুপুর ট্যুরিজম প্রপার্টি (ভূতপূর্ব বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজ) উল্লেখযোগ্য। এদের ওয়েবসাইট https://wbtdcl.wbtourismgov.in/home থেকে বুকিং করা যায় অথবা কলকাতার বুকিং অফিস থেকেও বুকিং করা যেতে পারে। এখানে গাড়ি পার্কিং-এর সুবন্দোবস্ত আছে।
৪. থাকার জন্য বিষ্ণুপুর ট্যুরিজম প্রপার্টি রেকমেন্ড করলেও খাবার এদের কাছ থেকে না নেওয়াই ভালো। এদের খাবার ওভারপ্রাইসড এবং রান্নাও অতি সাধারণ মানের। খাওয়ার জন্য এর আশেপাশেই অনেকগুলো হোটেল বা রেস্ট্যুরেন্ট আছে।
৫. বিষ্ণুপুরের প্রধান আকর্ষণ পোড়ামাটি বা টেরাকোটার মন্দির। মোটামুটি ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৭৪২ খ্রীষ্টাব্দের বিভিন্ন মল্লরাজাদের সময়ে নির্মিত এই মন্দিরগুলোর খ্যাতি মূলতঃ এদের গায়ের পোড়ামাটির কাজের জন্য।
৬. বিষ্ণুপুরের প্রায় সব মন্দিরই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করে। এর মধ্যে শুধুমাত্র রাসমঞ্চ, শ্যামরায় মন্দির আর জোড়বাংলা মন্দিরে ঢোকার জন্য টিকিট লাগে।
৭. রাসমঞ্চ, শ্যামরায় মন্দির আর জোড়বাংলা মন্দির - এই তিনটে জায়গা মিলিয়ে মাথাপিছু ২০/- টাকা করে টিকিট কাটতে হয়। টিকিট কাটার কোনও কাউন্টার নেই, মোবাইলের সাহায্যে কিউআর কোড স্ক্যান করে কাটতে হয়।
৮. বিষ্ণুপুরের সবকটা মন্দিরই খুব কাছাকাছি জায়গায়। নিজেদের গাড়ি থাকলে গাড়িতে, না থাকলে টোটোয় এমনকি হেঁটেও সবকটা জায়গা আনায়াসে ঘোরা যেতে পারে।
৯. পুরো বিষ্ণুপুর ঘুরে দেখতে ঘন্টা তিনচারেকের বেশি লাগে না। তাই চাইলে বিষ্ণুপুর ডে-আউট বা 1N/2D ট্রিপও করা যেতে পারে।
১০. বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়ী খুবই বিখ্যাত। এখানে তৈরি শাড়ী সারা দেশে এমনকি বিদেশেও রপ্তানী হয়। তাঁতীর বাড়িতে গিয়ে হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রের সাহায্যে এই শাড়ী বোনা দেখা যেতে পারে।
১১. বিষ্ণুপুরের আরেকটা বিখ্যাত জিনিস হল এখানকার পোড়ামাটির ঘোড়া। এখানে বিভিন্ন আকারের পোড়ামাটির ঘোড়া পাওয়া যায় যা ঘর সাজানোর জন্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
১২. বিষ্ণুপুর যাওয়ার সবথেকে ভালো সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্য সময়ে যাওয়া যায় না। তবে যেহেতু রোদে ঘুরে মন্দির দেখতে হবে, তাই গরমকালটা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
উপসংহারঃ
পোড়ামাটির ঘোড়া |
বিষ্ণুপুর ভ্রমণের আরও ছবি দেখতে হলে click here.