আমি ব্লগ লেখার খুব বেশি সমর্থক কোনওদিনও ছিলাম না, সত্যি কথা বলতে কি এখনও যে আছি তা নয় । তার একটা প্রধান কারণ আমার ধারণা ব্লগ লেখার থেকেও পড়া অনেক বেশি ক্লান্তিকর । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময়ই পড়তে শুরু করে শেষ করা হয়ে ওঠে না । নিজের ধৈর্য এবং/অথবা আগ্রহের অভাবকে 'ঠিক আছে, বাকিটা পরে পড়ব' জাতীয় অজুহাত দিয়ে ঢেকে দিই - আর আমরা সবাই জানি সেই 'পরে' টা আর কখনওই আসে না । তো, এই কারণে আমি ঠিক করেছি আমার ব্লগকে কখনওই অন্যের ক্লান্তির কারণ ঘটাব না, আমার ব্লগের বিষয় হবে প্রধানতঃ ভ্রমণ । আমার মতো যেসব বাঙালিরা ঘুরতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ব্লগ হবে তথ্যের একটা উৎস । আমার নিজের একটা অভ্যেস আছে, কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গাটা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি, আর ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে আমার বরাবরই মনে হয়েছে যে ইন্টারনেটে লেখালেখি করার ব্যাপারে বাঙালিদের থেকে কুঁড়ে খুব কম শিক্ষিত জাতই আছে । আমার মতো যেসব বাঙালিরা আছে, যারা ইন্টারনেটে কোনো একটা ইংরিজীতে লেখা দেখলেই না পড়ার চেষ্টা করে, তাদের জন্য আমার ব্লগ সহায়ক হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে শুরু করছি আমার ভ্রমণকাহিনী । আগেই বলে রাখি, আমি স্ট্যাটিসটিক্সের ছাত্র ছিলাম, তাই আমার ব্লগে তত্ত্বের থেকে তথ্যের দেখাই মিলবে বেশি ।

Tuesday, September 21, 2021

দীঘা ভ্রমণ

গেও বলেছি বাঙালীর তিনটে ঘোরার জায়গা দী-পু-দা সম্পর্কে আমার ব্লগে কখনও লিখব না। পু অর্থাৎ পুরী আর দা অর্থাৎ দার্জিলিঙ এর আগেই হয়ে গেছে, বাকি ছিল শুধু দী অর্থাৎ দীঘা। দীঘা আমি এর আগেও চারবার গেছি, কিন্তু শেষবার যখন গেছি তখনও ব্লগ লিখতাম না। এবারেও দীঘায় গিয়ে সেরকম নতুন এমন কিছুই দেখিনি যা জানানোর জন্য একটা পূর্ণদৈর্ঘ্যের ব্লগ লেখার দরকার হতে পারে। তাই পুরী আর দার্জিলিঙের মতো দীঘা ভ্রমণেও থাকছে শুধুমাত্র ভ্রমণপথ, ভ্রমণের সারসংক্ষেপ আর উপসংহার।

বিশেষ সতর্কীকরণঃ

১. এই ভ্রমণে আমরা জনবহুল স্থানে, বিশেষতঃ স্টেশনে, ট্রেনে ইত্যাদি জায়গায় সারাক্ষণ মাস্ক পরে থেকেছি এবং দূরত্ববিধি যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করেছি। সেইসঙ্গে প্রয়োজনমতো হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করেছি।

২. এই ভ্রমণে আমরা কোনও অবস্থাতেই কোনও পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার করিনি। অর্থাৎ প্লাস্টিকের ব্যবহার না করেও এই ভ্রমণ অনায়াসে করা যায়।

৩. এই ভ্রমণে আমরা কোনও কাগজ ব্যবহার বা নষ্ট করিনি। হোটেল বুকিং-এর রশিদ-এর প্রিন্ট আউট ব্যবহারের কোনও প্রয়োজন হয় না।

৪. এই ভ্রমণে আমাদের দলের কেউ ধূমপান করেনি। ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

আমার ব্লগের সমস্ত পাঠকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে করোনা ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করার জন্য সরকারী বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য। সেইসঙ্গে অনুরোধ করছি প্লাস্টিক, অপ্রয়োজনীয় কাগজের ব্যবহার আর ধূমপান বর্জন করার জন্য।

ভ্রমণপথঃ

রবিবার ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ঃ হাওড়া স্টেশন থেকে সকাল ৬ঃ৫০ মিনিটে হাওড়া দীঘা স্পেশাল ট্রেন - সকাল ১০ঃ১০ মিনিটে দীঘা। নিউ দীঘায় রাত্রিবাস।

সোমবার ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ঃ নিউ দীঘা থেকে ওল্ড দীঘায় গিয়ে ঘন্টাখানেক ঘোরা। নিউ দীঘায় রাত্রিবাস।

মঙ্গলবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ঃ দীঘা থেকে দুপুর ১২ঃ৩০ মিনিটে দীঘা হাওড়া স্পেশাল ট্রেন (সঠিক সময় সকাল ১০ঃ৩৫ মিনিট) - দুপুর ৩ঃ৩০ মিনিটে সাঁত্রাগাছি (ট্রেনটা সাঁত্রাগাছি থেকে হাওড়া পর্যন্ত বাতিল হয়ে গিয়েছিল)।

সারসংক্ষেপঃ

১. কলকাতা থেকে সড়কপথে নিউ দীঘার দূরত্ব ১৮৫ কিলোমিটারের মতো। ওল্ড দীঘার দূরত্ব এর থেকে ১.৫ কিলোমিটার কম।

২. কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন সময়ে দীঘা যাওয়ার জন্য বাস ছাড়ে। বাসে দীঘা যেতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে।

৩. দীঘা যাতায়াতের জন্য হাওড়া থেকে দৈনিক দু'টো করে ট্রেন চলে। যেতে ৩ঃ২০ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

৪. দীঘা স্টেশনটা প্রকৃতপক্ষে নিউ দীঘায়। স্টেশনের কাছাকাছির মধ্যেই অনেকগুলো হোটেল আছে। স্টেশন থেকে টোটো করে অথবা হেঁটে হোটেলে যাওয়া যায়।

৫. দীঘায় আমরা যে হোটেলে ছিলাম তার নাম 'হোটেল আমার দীঘা'। এদের ওয়েবসাইট http://www.hotelamardigha.com/ থেকে বুকিং করা যায় অথবা https://www.makemytrip.com/ থেকেও বুকিং করা যায়। হোটেলের যোগাযোগের নম্বরঃ 9874778528.

৬. 'হোটেল আমার দীঘা' খুবই ভালো একটা হোটেল। এর ঘর থেকে সমুদ্র দেখা না গেলেও এখান থেকে সমুদ্র হেঁটে মিনিট পাঁচেকের বেশি লাগে না। হোটেলের পরিষেবা এবং খাবার খুবই উন্নত মানের।

৭. দীঘার সমুদ্রের পাড় বাঁধানো আর এখানে বসে বসে সমুদ্রের শোভা উপভোগ করা যায়। জোয়ারের সময়ে জলের টান বেশি থাকলে অবশ্য এখানে পুলিশ বসতে দেয় না।

৮. দীঘা থেকে কাছাকাছির মধ্যে তালসারিতে ঘুরে আসা যায়। যাতায়াতের পথে চন্দনেশ্বর মন্দির পড়ে, সেটাও দেখে নেওয়া যেতে পারে। এই দু'টো জায়গাই উড়িষ্যার মধ্যে।

৯. দীঘা স্টেশনের একেবারে কাছে রয়েছে অমরাবতী লেক ও পার্ক। এখানে বোটিং, রোপওয়ের ব্যবস্থা আছে।

১০. নিউ দীঘার বিচের কাছে একটা মার্কেট আছে, এখানে সবধরনের জিনিসই পাওয়া যায়। এখান থেকে প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় নানারকম জিনিস কেনা যেতে পারে।

১১. নিউ দীঘার বীচের একেবারে পাশেই সরকারী লিজ নেওয়া একটা রেস্ট্যুরেন্ট আছে। এখানে সস্তায় অত্যন্ত ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।

১২. দীঘার সমুদ্রে জোয়ারের জলোচ্ছাস দেখার আগ্রহ থাকলে অবশ্যই পূর্ণিমা বা অমাবস্যায় যাওয়া উচিৎ। অমাবস্যায় জলোচ্ছাসের মাত্রা পূর্ণিমার থেকে বেশি ঠিকই, কিন্ত পূর্ণিমার সন্ধ্যে থেকে রাত পর্যন্ত জলের উপর চাঁদের আলোর সৌন্দর্যও কিছু কম আকর্ষক দৃশ্য নয়।

উপসংহারঃ

দীঘার সমুদ্রসৈকত
বাঙালীদের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় ঘোরার জায়গা যদি পুরী হয়, তাহলে দীঘা নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। দীঘা যাতায়াতের খরচ পুরীর থেকে কম কিন্তু দীঘায় সেরকম কোনও বড় মন্দির না থাকায় এর কোনও ঐশ্বরিক আকর্ষণ নেই। একসময়ে দীঘার খ্যাতি ছিল হানিমুনের জন্য, আজকাল মূলতঃ সপ্তাহান্তের ঘোরার জায়গায় পরিণত হয়েছে। দীঘা যাওয়ার জন্য কোনও প্রস্তুতি লাগে না, ট্রেনের বুকিং অথবা বাসের টিকিট সহজেই পাওয়া যায়। নিজের গাড়ি নিয়ে গেলেও সহজেই যাওয়া যায়। দীঘায় আগে থেকে বুকিং না করে গেলে ঘর পেতেও কোনও অসুবিধে হয় না। কম খরচে নির্ঝঞ্ঝাটে সমুদ্রসৈকতে দু'তিনদিন কাটানোর জন্য দীঘা একেবারে আদর্শ জায়গা। পুরী বা দার্জিলিঙের মতো দীঘাও বছরের যেকোনও সময়ে যাওয়া যায় আর এখানে সবকিছুই খুব সহজে পাওয়া যায়। পুরীর মতো এখানেও "ঘুরে খুব ভালো লাগল" এটা আমি কখনও কারুর মুখে যেমন শুনিনি, তেমনই "দূর দূর, দীঘা আবার একটা যাওয়ার মতো জায়গা হল ?" এরকম বলতেও কাউকে শোনা যায় না। তাই জীবনে কখনও দীঘায় না গিয়ে থাকলে (যেটার সম্ভাবনা খুবই কম) অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য একবার যেতে সব বাঙালিকেই অনুরোধ করব।

দীঘা ভ্রমণের আরও ছবি দেখতে হলে click here.

2 comments:

  1. দীঘা এমন একটি জায়গা যেখানে কম খরচে মধ্যবিত্ত মানুষের বিনোদনের প্রত্যাশা পূরণ হয়।

    ReplyDelete