আবার একটা পোস্ট করার সময় হয়ে গেল । কারণটা সহজেই অনুমেয়, খুব সম্প্রতি ব্যান্ডেল ঘুরে এলাম আর আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার ভ্রমণসর্বস্ব ব্লগকে আপডেট্ করার সময় এসেছে ।
এবারে গেছিলাম ব্যান্ডেল । (জানি এটা বাজে দিলাম কারণ শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে গোবরডাঙ্গা যাইনি ! কিন্তু কিছু একটা দিয়ে শুরু করতেই হয়) কলকাতা থেকে একটা সারাদিন ঘোরার পক্ষে খুবই সুন্দর জায়গা । ২৬শে অক্টোবর ২০১০ সকালে একটা শিয়ালদহ-বর্ধমান লোকালে আমাদের যাত্রা শুরু । আমি আর অমৃতা । এছাড়া অন্যান্য অনেকরকমভাবেই ব্যান্ডেল পৌঁছনো যায় - হাওড়া থেকে ট্রেনে বা কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে গাড়িতে । শিয়ালদহ-বর্ধমান লোকাল ব্যান্ডেল পৌঁছয় বেলা বারোটা নাগাদ । (এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি) স্টেশন থেকেই বাস অটো রিক্সা পাওয়া যায় আর ব্যান্ডেল ঘোরার জন্য এদের শেষের দু'টোর থেকে ভালো আর কিছু হয় না ।
স্টেশন থেকে অটো ধরে প্রথমে গেলাম ব্যান্ডেল চার্চ । রাস্তার বিবরণ দেওয়ার মতো কিছু নেই - একটু মফঃসল জায়গার বাড়িঘর বা রাস্তাঘাট যেরকম হয়, ব্যান্ডেল তার থেকে আলাদা নয় । তবে জায়গাটার বয়স প্রায় পাঁচশ বছর, সেইজন্যই হয়তো কিছু অনেক পুরনো বাড়ি বা তাদের ভগ্নাবশেষ চোখে পড়ে । সবমিলিয়ে মন্দ নয় ।
এখানে যেটা উল্লেখ না করে পারছি না সেটা হচ্ছে ব্যান্ডেলে এখনও সেইসব অটোগুলোই চলে যেগুলো হাইকোর্টের নির্দেশে ইতিপূর্বেই বাতিল হয়ে গেছে । (খবরের কাগজের ভাষায় 'কাটা তেলের অটো') এটা তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয় । যেটা উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে একটা অটোয় চালক ছাড়া ৮ (আট) জন যাত্রী বসে !!! সামনে চারজন আর পেছনে চারজন ! না, আমি কোনও বড় অটোর কথা বলছি না, কলকাতায় রাস্তা পেরোতে গেলে যেসব অটোগুলো কোমরের কাছে এসে ধাক্কা মারে আর যাদের দৌরাত্মে (পড়ুন বাঁদরামিতে) কলকাতার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, সেই ধরনের অটোর কথাই বলছি । অটোর সংখ্যা কম থাকার জন্যই হোক আর যে কারণেই হোক, মানুষ এই ধরনের কষ্টকর যাত্রা মুখ বুজে মেনেও নেয় !
স্টেশন থেকে অটো ধরে প্রথমে গেলাম ব্যান্ডেল চার্চ । রাস্তার বিবরণ দেওয়ার মতো কিছু নেই - একটু মফঃসল জায়গার বাড়িঘর বা রাস্তাঘাট যেরকম হয়, ব্যান্ডেল তার থেকে আলাদা নয় । তবে জায়গাটার বয়স প্রায় পাঁচশ বছর, সেইজন্যই হয়তো কিছু অনেক পুরনো বাড়ি বা তাদের ভগ্নাবশেষ চোখে পড়ে । সবমিলিয়ে মন্দ নয় ।
এখানে যেটা উল্লেখ না করে পারছি না সেটা হচ্ছে ব্যান্ডেলে এখনও সেইসব অটোগুলোই চলে যেগুলো হাইকোর্টের নির্দেশে ইতিপূর্বেই বাতিল হয়ে গেছে । (খবরের কাগজের ভাষায় 'কাটা তেলের অটো') এটা তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয় । যেটা উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে একটা অটোয় চালক ছাড়া ৮ (আট) জন যাত্রী বসে !!! সামনে চারজন আর পেছনে চারজন ! না, আমি কোনও বড় অটোর কথা বলছি না, কলকাতায় রাস্তা পেরোতে গেলে যেসব অটোগুলো কোমরের কাছে এসে ধাক্কা মারে আর যাদের দৌরাত্মে (পড়ুন বাঁদরামিতে) কলকাতার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, সেই ধরনের অটোর কথাই বলছি । অটোর সংখ্যা কম থাকার জন্যই হোক আর যে কারণেই হোক, মানুষ এই ধরনের কষ্টকর যাত্রা মুখ বুজে মেনেও নেয় !
ব্যান্ডেল চার্চ |
চার্চের আরেকটা অত্যন্ত সুন্দর জায়গা হল ছাদ । অদ্ভুত সুন্দর একটা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় ছাদে । ছাদ থেকে ব্যান্ডেল শহরের অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায় । চার্চের পাশেই গঙ্গা নদী - দেখতে খুব সুন্দর লাগে । ছাদে একটা ছোট ঘরের মতো আছে - সেখানে ব্যান্ডেল চার্চ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায় । এছাড়া আছে একটা ঘন্টাঘর । এখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয় ।
ব্যান্ডেল চার্চের বাইরেই দু'একটা ভাতের হোটেল আছে - খুবই সাধারণ । খুব বেশি ভালো খাবারের জায়গা আশা করে লাভ নেই - এখানে কাছাকাছির মধ্যে সব এরকমই । আমরা মুরগির মাংস আর ভাত খেলাম । খরচ পড়ল মাথাপিছু ৬০ টাকা । খাবারের মান মোটামুটি ভালোই - সঠিক বিশেষণ হল 'আশানুরূপ' ।
ইমামবাড়া |
ইমামবাড়ার একটা বড় আকর্ষণ হল এর ঘন্টার ঘর । এটা দেখার জন্য সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে হয় । আর এই ওঠার সিঁড়ি পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা । ওপরে উঠেও আলাদাই থাকে - সময়জ্ঞান আলাদা হওয়ার জন্যই কিনা জানিনা, পুরষ ও মহিলাদের ঘন্টাঘর বা ঘড়ির ঘর আলাদাভাবেই দেখতে হয় ।
ইমামবাড়া থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলাম । মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর একটা চৌমাথায় এসে পৌঁছলাম - সেখান থেকে আমাদের তৃতীয় গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অটো বা টাটা-ট্যাক্সি পাওয়া যায় । সামান্য সময় অপেক্ষা করার পর পেলাম ট্যাক্সি । আমাদের তৃতীয় গন্তব্য হংসেশ্বরী মন্দির - যেখানে যাওয়ার রাস্তা ব্যান্ডেল চার্চের পাশ দিয়েই ।
হংসেশ্বরী মন্দির |
ত্রিবেণী ঘাট |
ত্রিবেণীর বাসস্ট্যান্ডটা বেশ বড় - এখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার বাস রিক্সা অটো ট্যাক্সি সবই পাওয়া যায় । চাইলে গাড়ি ভাড়াও করা যেতে পারে । আমরা একটা অটোয় উঠলাম যেটা আমাদের ব্যান্ডেল চার্চের সামনে নামিয়ে দিল । ভাড়া মাথাপিছু ৮.৫০ টাকা । সেখান থেকে আরেকটা অটোয় স্টেশন । আমাদের ট্রেনের সময় ছিল দুপুর ৩ টে ৪১ মিনিট - ৩ টে ৩৭ মিনিটে আমরা ব্যান্ডেল স্টেশনে এসে পৌঁছলাম ।
সারসংক্ষেপঃ
১. কলকাতা থেকে একদিনের ঘোরার পক্ষে ব্যান্ডেল খুবই সুন্দর জায়গা - এর সবথেকে বড় সুবিধে হচ্ছে জায়গাটা খুব কাছে ।
২. কলকাতা থেকে বাসে ব্যান্ডেল যাওয়া যায়, চাইলে গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায় । তবে শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ট্ট্রেনে যাওয়া খুবই সুবিধেজনক আর তার খরচও খুব কম ।
৩. ব্যান্ডেলে ঘোরার জায়গা বলতে প্রধানতঃ তিনটে - চার্চ, ইমামবাড়া আর হংসেশ্বরী মন্দির । কোনটা আগে আর কোনটা পরে দেখা উচিৎ এর কোনও নিয়ম নেই - তবে চার্চ বিকেল পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায় আর মন্দির দুপুরে বন্ধ থাকে । তাই সেইমতো হিসেব করে গেলে সবগুলোই দেখা যাবে ।
৪. ত্রিবেণীও একটা দেখার জায়গা - তবে জায়গাটা সম্পর্কে ভালো করে জেনে তবেই যাওয়া উচিৎ - না হলে দেখার মতো কিছু নাও পাওয়া যেতে পারে ।
৫. ব্যান্ডেলে খুব ভালো খাওয়ার জায়গা পাওয়ার আশা না করাই ভালো - যেগুলো আছে সবই মোটামুটি একইরকম । মাছ ডিম মাংস ভাত পাওয়া যাবে - আরসালান এর বিরিয়ানির দেখা মিলবে না ।
উপসংহারঃ
কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে ব্যান্ডেল । ষোড়শ শতাব্দীতে শহর আর চার্চ তৈরি হয় যা তারপরবর্তীকালে আরও বড় ও উন্নত হয়েছে । এখানে একসময়ে ফরাসীদের উপনিবেশ ছিল । শহরে বহু প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বর্তমান । সাধারণ জায়গা - কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্ব অসাধারণ । ট্যুরিস্ট স্পট - কিন্তু এখানকার মানুষের জীবনযাপন আটপৌরে । দেখার জায়গা বলতে একটা মন্দির, একটা মসজিদ আর একটা গির্জা - আর চারপাশে সর্বধর্মসমন্বিত মানুষের সহাবস্থান - এটাই হয়তো সাধারণ ব্যান্ডেলের অসাধারণ হয়ে ওঠার চাবিকাঠি ।
নৈহাটী-ব্যান্ডেল লোক্যাল |