আমি ব্লগ লেখার খুব বেশি সমর্থক কোনওদিনও ছিলাম না, সত্যি কথা বলতে কি এখনও যে আছি তা নয় । তার একটা প্রধান কারণ আমার ধারণা ব্লগ লেখার থেকেও পড়া অনেক বেশি ক্লান্তিকর । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময়ই পড়তে শুরু করে শেষ করা হয়ে ওঠে না । নিজের ধৈর্য এবং/অথবা আগ্রহের অভাবকে 'ঠিক আছে, বাকিটা পরে পড়ব' জাতীয় অজুহাত দিয়ে ঢেকে দিই - আর আমরা সবাই জানি সেই 'পরে' টা আর কখনওই আসে না । তো, এই কারণে আমি ঠিক করেছি আমার ব্লগকে কখনওই অন্যের ক্লান্তির কারণ ঘটাব না, আমার ব্লগের বিষয় হবে প্রধানতঃ ভ্রমণ । আমার মতো যেসব বাঙালিরা ঘুরতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ব্লগ হবে তথ্যের একটা উৎস । আমার নিজের একটা অভ্যেস আছে, কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গাটা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি, আর ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে আমার বরাবরই মনে হয়েছে যে ইন্টারনেটে লেখালেখি করার ব্যাপারে বাঙালিদের থেকে কুঁড়ে খুব কম শিক্ষিত জাতই আছে । আমার মতো যেসব বাঙালিরা আছে, যারা ইন্টারনেটে কোনো একটা ইংরিজীতে লেখা দেখলেই না পড়ার চেষ্টা করে, তাদের জন্য আমার ব্লগ সহায়ক হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে শুরু করছি আমার ভ্রমণকাহিনী । আগেই বলে রাখি, আমি স্ট্যাটিসটিক্সের ছাত্র ছিলাম, তাই আমার ব্লগে তত্ত্বের থেকে তথ্যের দেখাই মিলবে বেশি ।

Sunday, January 31, 2021

ক্ষীরাই ভ্রমণ

ক্ষীরাই জায়গাটার নাম বছরখানেক আগেও জানতাম না। বারবার লক্‌ডাউন আর আন্‌লকের অনিশ্চয়তার জেরে ৩-৪ দিনের বেড়ানোর পরিকল্পনা করা যখন খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন কাছাকাছির মধ্যে কোথায় ডে-আউট ট্রিপ করা যায় সেটা খুঁজতে গিয়ে ইউটিউবে ক্ষীরাই-এর সম্পর্কে একটা ভিডিও পেলাম। ক্ষীরাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটা গ্রাম যেখানে ফুলের চাষ হয়। এখানে বহুসংখ্যক সুবিশাল আকৃতির ক্ষেত আছে, যে ক্ষেতের ফুল পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানী করা হয়। ভিডিওটা বেশ তথ্যসমৃদ্ধ আর সবটা ভালো করে দেখে এবং সেইসঙ্গে নিজে ইন্টারনেটে কিছুটা ঘাঁটাঘাঁটি করে জায়গাটা সম্পর্কে মোটামুটি জেনে ফেললাম। তারপর প্ল্যান করা আর সেই প্ল্যানের এক্সিকিউশন। গন্তব্য ক্ষীরাই - আমার ব্লগের এবারের পোস্ট।

৩১শে জানুয়ারী, ২০২১ রবিবার - সকাল ৮টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলাম আমরা ছ'জন অর্থাৎ আমি, অমৃতা, বাবা, মা, কথা, কলি। যাওয়ার পথে সোনামাসিকেও তুলে নিলাম। আমাদের যাত্রাপথ বিদ্যাসাগর সেতু - কোনা এক্সপ্রেসওয়ে - এন এইচ ১৬ - পাঁশকুড়া পুরাতন বাজার রোড - বাকিটা জিজ্ঞেস করে অথবা গুগ্‌ল্‌ ম্যাপ দেখে। বিদ্যাসাগর সেতু থেকে মোট রাস্তা ৮৫ কিলোমিটার। ধুলাগোড়ীর কাছে একটা পাঞ্জাবী রেস্ট্যুরেন্ট থেকে আলুর পরোটা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম।

দুপুর সাড়ে বারোটার একটু পরে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে আমরা অবশেষে ক্ষীরাই পৌঁছলাম। এখানে জানিয়ে রাখি, ক্ষীরাই বলতে কিন্তু বিশেষ কোনও একটা জায়গা বা ফুলের ক্ষেতকে বোঝায় না। এখানে অনেক জায়গাতেই এই ক্ষেত দেখা যায়, তবে সবথেকে বেশি বিখ্যাত যে জায়গাটা সেটা হল রেলব্রীজের নিচে। শেষের পথটা বেশ সরু, দু'টো গাড়ি পাশাপাশি চলতে বেশ অসুবিধে হয়। যাই হোক, উঁচুনীচু পথ দিয়ে আমরা গন্তব্যে পৌঁছে ... একটা বড় ধাক্কা খেলাম !

রেলব্রীজের নিচে গাড়ির মেলা
এর আগে ক্ষীরাই সম্পর্কে যা জানা ছিল তাতে জানতাম জায়গাটায় খুব বেশি লোক যায় না। আমরা গিয়ে দেখলাম হাজার হাজার লোক ! জানলাম জানুয়ারী মাসের একটা রবিবারের আনন্দবাজার পত্রিকায় ক্ষীরাই সম্পর্কে একটা লেখা বেরিয়েছে আর তাতেই অনেকে জায়গাটার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। আর আমাদেরই মতো এই লক্‌ডাউনে দূরে কোথাও যেতে না পেরে এখানে এসে জুটেছে। যতদূর চোখ যায়, ফুলগাছের চেয়ে মানুষের সংখ্যা বেশি। রেলব্রীজের নিচে যেন মেলা বসেছে। মেলা যে শুধু মানুষের তাইই নয়, গাড়িরও। পুরো জায়গাটায় যত গাড়ি এসে উপস্থিত হয়েছে তত গাড়ি শুধু রবিবার বিকেলে কলকাতার শপিং মলের পার্কিং লটেই দেখা যায় ! আর এখানে পার্কিং ম্যানেজ করার কেউ নেই, যে যার সুবিধেমতো গাড়ি রাখছে। আমরাও সেরকমই করলাম। ব্যতিক্রমই যেখানে নিয়ম, সেখানে আলাদা করে নিয়ম মানার চেষ্টা করা বৃথা (এটা দারুণ দিলাম, তাই না ? এটা একেবারে মৌলিক - আমার নিজস্ব - কপিরাইট প্রোটেক্টেড !)।

রেলব্রীজের পাশে গাঁদাফুলের ক্ষেত
রেলব্রীজটা আসলে কংসাবতী নদীর উপরে যদিও এখন নদীতে জল নেই। নদীর উপরেও অনেকে গাড়ি পার্কিং করেছে, ফেরিওয়ালারা নানারকম জিনিস নিয়ে বসে গেছে। রেলব্রীজের নিচ দিয়ে ব্রীজটা পেরিয়ে গেলে কয়েকটা বিশাল গাঁদাফুলের ক্ষেত রয়েছে, কিন্তু ভীড় দেখে আমরা আর সেদিকে এগোলাম না। বরং স্থানীয় লোকের কাছে জানা গেল এখান থেকে মিনিট দশেকের টোটো দূরত্বে আরেকটা এরকম বড় ক্ষেত রয়েছে, সেখানে চাইলে যাওয়া যেতে পারে। আমরা হেঁটে নদী পেরিয়ে ওপারে গিয়ে একটা টোটো ধরে গেলাম সেই ক্ষেতে।

চন্দ্রমল্লিকার ক্ষেত
এই ক্ষেতটা বিশেষ করে চন্দ্রমল্লিকার। সাদা হলুদ কমলা সবুজ ইত্যাদি নানারঙের চন্দ্রমল্লিকার দিগন্তবিস্তৃত ক্ষেত। এর মধ্যে সাদাটাই বেশি। দেখে মনে হয় সুবিশাল মাঠের মধ্যে যেন বরফ পড়েছে। এই ক্ষেতের মধ্যে ঢুকে গিয়ে ফুলের গায়ে হাত দিতে বারণ নেই, তবে সেটা না দেওয়াই ভালো। ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের বেড়া দিয়ে পাঁচিল করা রয়েছে, তার মধ্যে দিয়ে হাঁটার পথ। আমরা হেঁটে হেঁটে ক্ষেতের অনেকটা ভিতরে চলে গেলাম। এখানেও লোকজনের সংখ্যা খুব কম নয়, তবে অনেকটা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ফুলের ক্ষেতের মধ্যে কয়েকটা স্থানীয় বাচ্চা ছেলেমেয়ে ফুলের মুকুট বিক্রি করছে। সরু তার দিয়ে ফুল গেঁথে তৈরি, দাম ১০/- টাকা। আমরা কয়েকটা কিনলাম।

ফুলের ক্ষেতে ফুলের মুকুট পরে ফুলেরা আর ফুলকি
ফুলের ক্ষেতে আমরা আরও কিছুক্ষণ কাটালাম, তবে এর বিবরণ আলাদা করে দেওয়ার আর কিছু নেই। ক্ষেতগুলো সব একইরকম, ফুলগুলো আলাদা। আরও কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে একজায়গায় দেখলাম ক্ষেতের মধ্যেই একটা ছাউনি ধরনের করে সেখানে একটা অস্থায়ী ভাতের হোটেল খুলে ফেলেছে। ক্ষীরাই এর ফুলের ক্ষেতের মধ্যে খাবারের ব্যবস্থা কিছুই নেই, তাই আমরা এখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। রান্না বেশ ভালো। ভাত, ডাল, ডিমের কারি, চিকেন ইত্যাদি নিয়ে খরচ হল ৩৫০/- টাকা।

রেললাইনের উপরে
খাওয়ার পরে আমরা আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে টোটো ধরে রেলব্রীজের নিচ পর্যন্ত ফিরে এলাম। এই রাস্তাটায় কিছু গাড়ি নিয়ে চলাচল করা একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না কারণ এখানে রাস্তা পিচের নয় আর একটামাত্র গাড়িই চলাচল করতে পারে। উল্টোদিক থেকে একটা বাইক এসে গেলেও রাস্তায় যানজট হয়ে যাবে। রেলব্রীজের নিচে পৌঁছে আমি, কথা আর কলি একবার ব্রীজের উপরটা ঘুরে এলাম। এখানে পাশেই দক্ষিণপূর্ব রেলওয়ের ক্ষীরাই স্টেশন। এই লাইনে বেশ ঘনঘন ট্রেন চলাচল করে, কয়েকটা ট্রেন দেখারও সুযোগ হয়ে গেল।

দুপুর সাড়ে তিনটে বাজে, ক্ষীরাইতে আর কিছু করার নেই তাই আমরা গাড়ি নিয়ে ফেরার পথ ধরলাম। যে পথে যাওয়া, সেই পথেই ফেরা। ফেরার পথে কোলাঘাট পেরোনোর একটু পরে একজায়গায় দাঁড়িয়ে একটু চা খেয়ে নেওয়া হল। তারপর আবার বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম।

সারসংক্ষেপঃ

১. কলকাতা থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পাঁশকুড়ার কাছে একটা গ্রাম ক্ষীরাই। ফুলচাষ ও ফুলের রপ্তানীর জন্য এই গ্রাম বিখ্যাত।
২. ক্ষীরাই যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল ফ্রেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি। এই সময়ে এখানকার ক্ষেতে অন্যান্যফুলের সঙ্গে গোলাপও দেখা যায়।
৩. গাড়ি করে যাওয়ার রাস্তা হল বিদ্যাসাগর সেতু - কোনা এক্সপ্রেসওয়ে - এন এইচ ১৬ - পাঁশকুড়া পুরাতন বাজার রোড। শেষের পথটা গুগ্‌ল্‌ ম্যাপ দেখে বা স্থানীয় লোককে জিজ্ঞেস করে যেতে হবে। 
৪. ট্রেনে গেলে হাওড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের লোক্যাল ট্রেন ধরে (এক্সপ্রেস ট্রেন এখানে থামে না) পাঁশকুড়ার পরের স্টেশন ক্ষীরাইতে নামতে হবে। হাওড়া থেকে ক্ষীরাই ট্রেনে ১ঃ৫০ মিনিট সময় লাগে।
৫. গাড়ি অথবা ট্রেন যাতেই যাওয়া হোক, ঘুরে ঘুরে ফুলের ক্ষেত দেখার জন্য টোটো ভাড়া করে নেওয়াই ভালো। তাতে আরেকটা সুবিধে এই যে টোটোর ড্রাইভাররা ফুলের ক্ষেতের জায়গাগুলো ভালোভাবে চেনে।
৬. ক্ষীরাইতে নানারকম ফুলের বাগান আছে, যার মধ্যে গাঁদা আর চন্দ্রমল্লিকার প্রাধান্য বেশি। এখানে বিভিন্ন ফুলগাছের চারা বিক্রিও হয়।
৭. ক্ষীরাইতে খাওয়াদাওয়ার বিশেষ কোনও জায়গা নেই, তাই সঙ্গে অবশ্যই কিছু শুকনো খাবার রাখা উচিৎ। ছুটির দিনে ভিড় বেশি হলে এখানে কিছু অস্থায়ী খাবারের ব্যবস্থা হয় ঠিকই, কিন্তু তার উপর নির্ভর না করাই ভালো।

উপসংহারঃ

ক্ষীরাই
কলকাতার বেশ কাছে একটা ছোটখাটো ডে-আউট প্ল্যানের জন্য ক্ষীরাই বেশ ভালো একটা জায়গা। নানারকমের ফুলের ক্ষেতের সমারোহে জায়গাটায় একটা নয়নাভিরাম ব্যাপার আছে, সেটা বলতেই হবে। দিগন্তবিস্তৃত জমিতে যতদূর দু'চোখ যায়, মনে হয় নানারঙের চাদর বিছানো রয়েছে। যদিও এখানকার সৌন্দর্য প্রকৃতির স্বাভাবিক সৃষ্টি নয়, বরং বলা যায় প্রকৃতির দাক্ষিণ্যে মানুষের সৃষ্টি, কিন্তু তাও এখানকার সৌন্দর্য বিশেষ মনোরম। ক্ষীরাইতে অনেককিছু দেখার আছে তা নয়, তবে ঘোরাঘুরি করে সারাদিনটা বেশ কেটে যায়। গাড়িতে বা ট্রেনে যেভাবেই যাওয়া হোক, যাতায়াতের রাস্তাটাও বেশ সুন্দর। করোনার লক্‌ডাউনের মধ্যে বাড়িতে বসে থাকার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য এখানে যাওয়া যেতেই পারে। আর করোনা পরবর্তী সময়েও এখানে একটা দিন কাটাতে ভালো লাগবে বলেই আমার ধারণা। তবে রবিবার বা ছুটির দিনগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাই ভালো, কারণ 'মানুষ' জীবটা যতই প্রকৃতির সৃষ্টি হোক, ফুলের ভীড়ের মাঝে তাদের ভীড়টা শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বিরক্তির উদ্রেককারীও বটে !

ক্ষীরাই ভ্রমণের আরও ছবি দেখতে হলে click here.

Friday, January 22, 2021

কলকাতা ভ্রমণ : পর্ব - ৩ (বটানিক্যাল গার্ডেন)

'আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বোস ভারতীয় উদ্ভিদ উদ্যান' বা 'বটানিক্যাল গার্ডেন' জায়গাটা ভৌগলিকভাবে যদিও কলকাতার মধ্যে পড়ে না, কিন্তু কলকাতা ও হাওড়াকে একসঙ্গে যমজ শহর বলা হয় অর্থাৎ যা এখানকার তাইই ওখানকার । সেই কারণে বটানিক্যাল গার্ডেন ভ্রমণের কথা কলকাতা ভ্রমণের মধ্যেই লিখছি । হাওড়া জেলার শিবপুরে অবস্থিত এই বটানিক্যাল গার্ডেন ভারতবর্ষের মধ্যে শুধু বৃহত্তমই নয়, প্রাচীনতমও বটে । জায়গাটা আমার মাসির বাড়ির খুব কাছে হওয়ায় ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার গিয়েছি । তারপর যা হয় - বড় হওয়ার পরে সেভাবে কখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি । করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যখন ডে-আউট ট্রিপের মাধ্যমে নিজের শহরটাকে আরেকটু ভালোভাবে দেখে নেওয়ার কথা ভাবলাম, তখন সেই লিস্টে ওপরের দিকেই রাখা হল বটানিক্যাল গার্ডেনের নাম ।

গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার পর
২২শে জানুয়ারী, ২০২১ শুক্রবার । দুপুর বারোটা নাগাদ আমি, অমৃতা, বাবা, মা আর কথা-কলি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে বটানিক্যাল গার্ডেন পৌঁছলাম তখন সাড়ে বারোটা । গুগ্‌ল্‌ ম্যাপের যুগে পথনির্দেশ দেওয়া নিষ্প্রয়োজন শুধু এইটুকু জানিয়ে রাখি নিজেদের গাড়ি নিয়ে গেলে পার্কিং-এর জন্য বটানিক্যাল গার্ডেনের ১ নং গেটে যেতে হবে । কলকাতা থেকে গেলে দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে আন্দুল রোড ধরে শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনিস্টিটিউট অফ্‌ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (পূর্বতন শিবপুর বি ই কলেজের)-এর সামনে দিয়ে গিয়ে ১ নং গেটে গাড়ি পার্কিং করার জায়গা । এখানে ৫০ টাকা দিয়ে সারাদিনের জন্য গাড়ি পার্কিং করা যায় । পার্কিং করে আমরা ভিতরে ঢোকার টিকিট কাটলাম । টিকিটের দাম মাথাপিছু ১০/- টাকা (বাচ্চাদের টিকিট লাগে না)।

এখানে আরও একটা দরকারী তথ্য জানিয়ে রাখি । বটানিক্যাল গার্ডেন ভালোভাবে ঘুরে দেখতে কমপক্ষে ৪ - ৫ ঘন্টা সময় লাগে, তাই সঙ্গে খাবারদাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় জল রাখা ভালো কারণ ভিতরে এইদু'টোর কোনওটারই ব্যবস্থা নেই । গতবছরের আমফানের ফলে ভিতরের জল সরবরাহব্যবস্থা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে এখানে হাতধোওয়ার নূন্যতম জলের যোগানও নেই । যদিও বটানিক্যাল গার্ডেনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে ভিতরে খাবার নিয়ে ঢোকার নিয়ম নেই, কিন্তু আমরা গেটের সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করেই সঙ্গে খাবার নিয়ে ঢুকেছি । ভিতরে বসে স্বচ্ছন্দে খাবার খাওয়া যেতে পারে, তবে এইটুকু খেয়াল রাখতেই হবে কোনওভাবেই যেন ভিতরের পরিবেশ নোংরা না হয় । আরও একটা কথা - রবিবার বা ছুটির দিনে এখানে কিছুটা ভীড় হয়, তাই সেরকম বাদ দিয়ে যেতে পারলে ঘুরতে সুবিধে হবে বলে আমার ধারণা ।

বটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে
বটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে ঘোরার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ করে দিচ্ছি না কারণ গাছপালা লতাগুল্ম ছোটবড় লেক জলাশয় বাগান গ্রিন হাউস মিলিয়ে ভিতরটা সবকিছুর একটা সাড়ে বত্রিশভাজা যেখানে এ বলে আমার দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ ! আমি বটানির ছাত্র নই, আমাদের চারপাশের কিছু পরিচিত গাছপালার বাইরে খুব বেশি কোনও গাছ চিনি না কিন্তু আমি গাছ খুব ভালোবাসি আর সেই কারণে বটানিক্যাল গার্ডেনের পরিবেশ আমার কাছে খুবই চিত্তাকর্ষক । ভিতরের রাস্তা খুবই পরিপাটি আর জায়গায় জায়গায় টাঙানো ম্যাপ দেখে এগোতে কোনওই অসুবিধে হয় না । বিশেষ কিছু দেখার উদ্দেশ্যে নয়, পুরো জায়গাটা শুধু হাঁটতেই খুব ভালো লাগে (ভিতরে এমনিতেও কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা নেই, কাজেই ঘোরার একমাত্র উপায় হল হাঁটা !)।

বিশাল বটবৃক্ষ (প্যানোরমিক ভিউ)

তবে একেবারে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে হাঁটা নয়, বটানিক্যাল গার্ডেনে এসে এখানকার বিখ্যাত 'বিশাল বটবৃক্ষ'টা দেখার আগ্রহ আমার সবসময়েই থাকে । যারা জানে না, তাদের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছি বটানিক্যাল গার্ডেনের এই সুবিশাল বটগাছটা পৃথিবীর সবথেকে বড় বটগাছ । প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর বিপুল সংখ্যক বায়বীয় মূল বা এরিয়াল রুট (উইকিপিডিয়া অনুযায়ী বর্তমানে এই মূলের সংখ্যা ৩,৭৭২)। পরপর দু'টো ঘূর্ণিঝড়ে এর মূল কান্ড ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর ১৯২৫ সালে এই মূল কান্ডটাকে সরিয়ে ফেলা হয় । কিন্তু তারপরেও গাছটি অনায়াসে বেঁচে রয়েছে এবং নিজের শাখা-প্রশাখা ও মূল বিস্তার করে চলেছে । দর্শকরা যাতে গাছের একেবারে কাছে যেতে না পারে সে'জন্য এই গাছের চারদিকে একটা লোহার জালঘেরা পাঁচিল করে দেওয়া হয়েছে এবং সেই পাঁচিলের চারদিকে একটা হাঁটার রাস্তা রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ৩৩০ মিটার । গাছ অবশ্য এই পাঁচিলের বাইরেও নিজের ডালপালা বিস্তার করে চলেছে । দূর থেকে গাছটাকে একটা গাছের বদলে একটা ছোটখাটো বন বলে মনে হয় । আমরা গাছের কাছে গিয়ে ভালোভাবে দেখলাম ও ছবি তুললাম । বটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়ার একটা প্রধান আকর্ষণ যে এই 'বিশাল বটবৃক্ষ' দর্শন সেটা অস্বীকার করব না ।

গোলাপ বাগান
বটগাছ দর্শনের পরে ডানদিকে সামান্য কিছুটা এগোলে একটা ঘেরা জায়গায় গোলাপের বাগান । লাল, গোলাপী, হলুদ, সাদা ইত্যাদি নানারঙের গোলাপের এক অপূর্ব সমারোহ এই বাগান । এখানেও অত্যুৎসাহী জনতাকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না, তাই বাইরে থেকে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে ।





এই গোলাপ বাগানের কাছেই রাস্তার ধারে একটা জায়গায় বসে আমরা সঙ্গে আনা লুচি, আলুরদম, সীতাভোগ, মিহিদানা দিয়ে আমাদের দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম । এখানে জায়গায় জায়গায় ডাস্টবিন রয়েছে, তাই খাওয়ার পর আবর্জনা ফেলার জায়গার অভাব নেই । তাই আবারও বলছি যেখানে সেখানে জিনিস ফেলে নোংরা করা একেবারেই চলবে না ।

বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে গঙ্গার দৃশ্য
খাওয়ার পরে আবার হাঁটতে শুরু করলাম । এবারে আমাদের উদ্দেশ্য গঙ্গার ধারে যাওয়া । বটগাছটা বাগানের একদিকে আর গঙ্গার ধারটা অন্যদিকে । এই দুইয়ের ব্যবধানটা হেঁটে মেটাতে আমাদের লাগল প্রায় চল্লিশ মিনিট । গঙ্গার ধারে বসার কয়েকটা জায়গা আছে, সেখানে আমরা কিছুক্ষণ বসে রইলাম । বিকেল পৌনে চারটে বাজে, সূর্য পশ্চিম আকাশে গিয়ে আজকের মতো দিনের ইতি ঘোষণা করার তোড়জোড় শুরু করেছে । গঙ্গার ওপরে আমাদের সামনে দিয়ে একটা লঞ্চ চলে গেল । ওপারে কলকাতার মেটিয়াবুরুজ এলাকায় কারখানার চিমনি থেকে ধোঁওয়া বেরোচ্ছে । আমরা যেখানে বসে আছি সেখানে গাছের পাতার শিরশির শব্দ আর পাখির ডাক ছাড়া কোনও অপ্রাকৃতিক শব্দ নেই । এই পরিবেশে চুপচাপ বসে বসে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে খুব ভালো লাগে - মনটা চলে যায় কোনও এক সুদূর অতীতে - মনের মণিকোঠায় ঘুরেফিরে আসে কতই না পুরনো স্মৃতি !

ফেরার পথে
সম্বিৎ ফিরল (না এটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল, অতও কিছু আত্মনিমগ্ন হয়ে পড়িনি !) সিকিউরিটি গার্ডদের ডাকাডাকিতে । বটানিক্যাল গার্ডেন পাঁচটায় বন্ধ, চারটে থেকেই এরা লোকজনকে তাড়িয়ে বের করার কাজ শুরু করে । এত বড় জায়গায় এ'ছাড়া আর উপায় নেই । আমরা এদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে বেরোনোর পথ ধরলাম । গঙ্গার ধারে যেখানে বসেছিলাম সেখান থেকে ১ নং গেটে পৌঁছতে আমাদের প্রায় আধঘন্টা সময় লাগল ।

বাগানের সময়সূচী
গেটের ঠিক পাশেই বাগান খোলা-বন্ধের সময়ের একটা ফলক লাগানো আছে । সময়ের তালিকাটা লেখার মধ্যে দেওয়ার বদলে এখানে সেই ফলকেরই একটা ছবি দিয়ে দিলাম (যদি কেউ বাংলা না পড়তে পারে তাহলে অন্ততঃ সে হিন্দী বা ইংরিজীতে বাগানের সময়সীমাটা দেখে নিতে পারবে যদিও বাংলা না পড়তে পারলে ব্লগটা পড়তে পারবে কিনা সেই নিয়ে আমার সন্দেহ আছে !)।


উপসংহারঃ

বটানিক্যাল গার্ডেন
১৭৮৭ সালে তৈরি এই বটানিক্যাল গার্ডেন প্রাথমিকভাবে মূলতঃ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও পরবর্তীকালে জায়গাটা দেশবিদেশের গাছের সংগ্রহশালায় পরিণত হয় । বর্তমানে পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সবক'টির কিছু কিছু গাছের নমূনা রয়েছে এই বটানিক্যাল গার্ডেনে । শুধুমাত্র পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বটবৃক্ষের জন্য নয়, এই বটানিক্যাল গার্ডেনের সৌন্দর্য এর অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশে । গাছপালা লতাগুল্ম সম্বলিত এত সুবিশাল পরিবেশ আমাদের চারপাশে দুর্লভ - বিশেষ করে আমরা যারা শহরের 'জাংগল অফ্‌ কনক্রিট'-এর মধ্যে থাকি । কনক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে উদ্ভিদের এই জঙ্গলে কয়েক ঘন্টা কাটানো আমাদের কাছে তাই এক অসামান্য অভিজ্ঞতা । যেদিকেই তাকানো যায়, শুধু সবুজের সমারোহ - চোখের পক্ষে এক অত্যন্ত আরামদায়ক অনুভূতি । এই অনুভূতির টানেই যাওয়া - প্রকৃতির হাতে কয়েকঘন্টার জন্য নিজেকে সঁপে দেওয়ার টান । এই টানটা যারা অনুভব করে, তাদের জন্য বটানিক্যাল গার্ডেন অবশ্য গন্তব্য !

বটানিক্যাল গার্ডেনের আরও ছবি দেখতে হলে click here.

Sunday, January 10, 2021

কলকাতা ভ্রমণ : পর্ব - ২ (স্বামীনারায়ণ মন্দির)

শ দিন আগে নতুন বছর শুরু হয়েছে । আমাদের রাজ্যে তথা দেশে লক্‌ডাউন না থাকলেও করোনার অতিমারী পরিস্থিতি বর্তমান । এই পরিস্থিতিতে কোথাও বেড়াতে গিয়ে রাত্রিযাপন নিরাপদ নয় (যদিও চারপাশে অনেককেই এটা করতে দেখছি । সৌভাগ্যের বিষয় সেরকম কারুর সামাজিক সংস্পর্শে এখনও পর্যন্ত আমাকে আসতে হয় নি !), তাই আমরা ঠিক করেছি আপাতত শুধু ডে-আউট ট্রিপ করব । আর সেটা করার জন্য আমাদের প্রিয় শহর কলকাতার চেয়ে উপযুক্ত কিছু আছে কি ? তাও ভাবতে অবাক লাগে যে কলকাতা ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্ব আজ লিখতে বসেছি, সেই কলকাতা ভ্রমণের পর্ব ১ লিখেছিলাম আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে ! সত্যিই, আমাদের এই প্রিয় শহরটার কত কি যে আজও আমাদের দেখা বাকি । এইরকম অদেখা দ্রষ্টব্যের লিস্টে একটা টিক্‌ দেওয়ার জন্য আমাদের এবারের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ - স্বামীনারায়ণ মন্দির ।

১০ই জানুয়ারী ২০২১, রবিবার । দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোলাম আমি, অমৃতা, বাবা, মা আর কথা-কলি । কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে জোকা পেরিয়ে অল্প কিছুদূর গেলেই স্বামীনারায়ণ মন্দিরের অবস্থান - আমাদের বাড়ি থেকে দূরত্ব ২৮ কিলোমিটারের মতো (রাজভবন থেকে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার) । পৌঁছতে লাগল ঠিক এক ঘন্টা ।

পার্কিং লট থেকে স্বামীনারায়ণ মন্দির
স্বামীনারায়ণ মন্দিরটা ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরেই । গেট দিয়ে ঢুকে সুবিশাল পার্কিংলটে ৪০ টাকা দিয়ে গাড়ি রেখে আমরা মন্দিরের দিকে গেলাম । শীতকালের রবিবার বিকেল - তাই মন্দিরে ভীড় হয়েছে ভালোই । তবে চত্বরটা বিশেষ বড় হওয়ায় আর লোকসমাগম প্রচন্ডরকমের না হওয়ায় ঠাসাঠাসিটা হয়নি । পার্কিং লট থেকে মন্দিরে যাওয়ার পথে চোখে পড়ল এখানকার খাবারের জায়গা । 


এখানে সেইসঙ্গে একটা তালিকা চোখে পড়ল যেটা আমি এর আগে কখনও কোনও মন্দিরে দেখিনি । তালিকাটা হল গো-পালনের অর্থদানের । সেই তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে কম একটি গরু একদিন পালনের জন্য দানের অর্থ ৫০০/- থেকে সবচেয়ে বেশি ২৫টি গরু একবছর পালনের জন্য ২১ লক্ষ টাকা দেওয়া যেতে পারে (আমি নিশ্চিত এর বেশিও দেওয়া যায় !)। 

মন্দিরের সামনের চত্বর
খাবারের জায়গাটা পেরিয়ে মূল মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলাম । পুরো জায়গাটা খোলামেলা হওয়াতে সুবিশাল মন্দিরটা সব জায়গা থেকেই দেখা যায় । মন্দিরের সামনে একটা বিরাট মার্বেলের চত্বর, সেখানে লোকজন ইতস্ততঃ ঘোরাঘুরি করছে । মূল মন্দিরে ছবি তোলা নিষেধ, তাই এখানে দাঁড়িয়ে মন্দিরকে ডাইনে বাঁয়ে ওপরে নিচে রেখে বা আদৌ না রেখে নানারকম অ্যাঙ্গেলে লোকজন ছবি বা সেল্‌ফি বা গ্রুপফি তুলছে । এখানে বসার জায়গা নেই, তবে চত্বরের দু'পাশে ইঞ্চিআটেক উঁচু আর ফুটখানেক চওড়া ছোট্ট পাঁচিলের মতো করা আছে, সেখানে চাইলে বসা যেতে পারে ।

মন্দিরে ওঠার সিঁড়ি
এই চত্বরটা যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে মূল মন্দিরের ওঠার সিঁড়ি । এখানে ওঠার আগে অবশ্যই জুতো খুলতে হয় আর এখান থেকেই ছবি না তোলার এলাকা শুরু । পুরো জায়গাটায় প্রচুর সংখ্যক সিকিউরিটি গার্ড আর সেইসঙ্গে মন্দিরের কর্মীরা রয়েছেন, তাই কারুর চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিছু করার চেষ্টা না করাই ভালো ! আমরা সিঁড়ি দিয়ে মূল মন্দিরের উপরে উঠলাম । উপর থেকে চারপাশের দৃশ্য খুবই সুন্দর । পুরো জায়গাটা ফাঁকা হওয়াতে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায় । বিকেল পৌনে পাঁচটা বাজে, এখান থেকে অস্তগামী সূর্যের দৃশ্যও বেশ ভালো লাগল ।

এখানে পাশাপাশি তিনটে প্রকোষ্ঠে তিনরকম মূর্তি রয়েছে । একটাতে ভগবান স্বামীনারায়ণ ও অক্ষরব্রাহ্মণ গুণতিআনন্দ স্বামী, একটাতে শ্রী ঘনশ্যাম মহারাজ আর তৃতীয়টায় শ্রী হরিকৃষ্ণ মহারাজ ও শ্রী রাধাকৃষ্ণদেব । মূর্তিগুলো খুব সুন্দরভাবে কারুকার্য করা আর সাজানো । আমরা কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আবার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম ।

করোনা পরিস্থিতির জন্য কিনা জানি না, তবে মন্দির কর্তৃপক্ষ পুরো জায়গাটায় একমুখী জনতার স্রোত বজায় রেখেছে । অর্থাৎ আমরা যেদিক দিয়ে মন্দিরে উঠেছিলাম, সেদিক দিয়ে নামলাম না । নিচে নেমে বেরোনোর পথ মন্দিরের ভিতর দিয়ে । এখানে ভিতরের দেওয়ালে স্বামীনারায়ণ মহারাজের জীবনের নানারকম ঘটনাবলীর আঁকা ছবি টাঙানো রয়েছে । ঘরের মাঝখানে একটা কাচের ঘরের মধ্যে নীলকান্ত বর্ণির (ওরফে স্বামীনারায়ণ) একটা সোনার মূর্তি রয়েছে । এই ঘর ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় রয়েছে । তাছাড়া এখানে মন্দির, স্বামীনারায়ণ ইত্যাদির সম্পর্কে বইও পাওয়া যায় । এখানেও ছবি তোলা নিষেধ, তাই আমরা কিছুক্ষণ দেখে বেরিয়ে এলাম ।

এখানে জানিয়ে রাখি মন্দির খোলা থাকার সময় সকাল ৭ঃ৩০ থেকে দুপুর ১২ টা এবং বিকেল ৪ টে থেকে রাত ৮ঃ১৫ । কিন্তু এর মাঝেও বিভিন্ন সময়ে মন্দির দর্শনের জন্য বন্ধ থাকে, তাই যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে মন্দিরের ওয়েবসাইট থেকে দর্শনের সময়টা জেনে নিয়ে যাওয়াই ভালো । বর্তমান সময়সূচীটা আমি এখানে দিয়ে দিলাম (সৌজন্যে মন্দিরের ওয়েবসাইট)।










সন্ধ্যের আলোয় স্বামীনারায়ণ মন্দির
মন্দিরের সামনের চত্বরে পৌঁছে আমরা আরও কিছুক্ষণ বসে রইলাম । সন্ধ্যে হয়ে গেছে, মন্দিরের আলোগুলো সব জ্বলে গেছে । এইসময়ে মন্দিরটা দেখতে বেশ সুন্দর লাগে । তাই যদি মন্দিরে বিকেলের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে সন্ধ্যে পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর বেরোলেই ভালো লাগবে । সন্ধ্যে ছ'টা নাগাদ আমরা মন্দির থেকে বেরিয়ে পড়লাম ।



উপসংহার ঃ

স্বামীনারায়ণ মন্দির
ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে কলকাতার দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বামীনারায়ণ মন্দির । এর ভৌগোলিক অবস্থান এই জায়গাকে কিছু স্বাভাবিক বাড়তি সুবিধে দিয়েছে । নিজের গাড়ি নিয়ে গেলে যেমন এখানে পার্কিং-এর সুব্যবস্থা আছে, তেমনই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে গেলে মন্দিরের গেটের একেবারে সামনে পর্যন্ত পৌঁছনোর সুবিধেও রয়েছে । এই মন্দিরের সবকিছুই ভীষণভাবে নিউ দিল্লীর অক্ষরধাম স্বামীনারায়ণের মন্দিরকে মনে করিয়ে দেয়, যদিও ওখানে কিছু বাড়াবাড়ি আছে যেগুলো এখানে নেই । এখানে না গেলে যে বিরাট কিছু অদেখা থেকে যাবে এমন নয়, কিন্তু সময় করে একদিন দেখে এলে ভালই লাগবে । পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখতে ঘন্টাখানেকের বেশি লাগবে না আর আমার মনে হয় স্বামীনারায়ণ মন্দির আমাদের সে'টুকু সময় লগ্নি করার যোগ্য !

স্বামীনারায়ণ মন্দিরের নিজস্ব ওয়েবসাইট https://www.baps.org/Global-Network/India/Kolkata.aspx থেকে এখানকার সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যেতে পারে ।