আমার গতবারের বক্খালি ভ্রমণ সম্পর্কে পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করতে হবে । এ'বারেরটা পড়ার আগে আগেরবারেরটা পড়ে নিলে ভালো হবে বলে আমার মনে হয় ।
১২ই সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার । রাজ্যে এবং দেশে করোনা ভাইরাসের অতিমারী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য 'আন্লক' প্রক্রিয়া কিছুদিন হল শুরু হয়েছে । এরই মধ্যে আমরা বেরিয়ে পড়লাম আমাদের গাড়ি নিয়ে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ । কলকাতা থেকে বক্খালি দু'রকম রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় - একটা ই এম বাইপাস - কামালগাজী - বারুইপুর - আমতলা হয়ে আর অন্যটা খিদিরপুর - ডায়মন্ড হারবার রোড - বেহালা - আমতলা হয়ে । আমার মনে হয় দ্বিতীয়টা দিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয় কারণ এতে সময় কম লাগে । আমরা বেহালার কাছে একটা মিও আমোরে থেকে স্যান্ড-উইচ্ ইত্যাদি কিনে নিলাম সকাল ও সন্ধ্যের জলখাবারের জন্য । তারপর আরও কিছুক্ষণ চলার পরে সাড়ে দশটা নাগাদ রাস্তায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করে ফেললাম ।
২০১০ থেকে ২০২০ - দশ বছর । অনেকটা সময় । এই সময়ের মধ্যে আমাদের রাজ্যে সরকার থেকে আমার নিজের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস - বদলে গেছে অনেক কিছুই । স্বয়ং আমিই বদলে গেছি ! সেইসঙ্গে বদলে গেছে বক্খালি ভ্রমণের ভ্রমণসঙ্গী । গতবার আমরা গিয়েছিলাম ছ'জন বন্ধু আর এ'বারে আমার সঙ্গে অমৃতা, বাবা, মা, কথা, কলি আর আমার বড়মাসি । গতবার বক্খালি ভ্রমণ ছিল 1N/2D আর এবারে ডে-আউট ।
যাওয়ার পথে |
রাস্তা সম্পর্কে একটা জরুরি তথ্য এখানে দেওয়া দরকার । ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে চলতে চলতে শিরাকোলের কাছে রাস্তাটা দু'ভাগে ভাগ হয়ে গেছে - ডানদিকে চলে গেছে ডায়মন্ড হারবার রোড আর সোজা চলে গেছে উস্থি রোড । গুগল্ ম্যাপ বলে এই উস্থি রোড ধরে যাওয়ার জন্য কারণ এতে সময় সামান্য কিছুটা কম লাগে আর দূরত্ব অনুযায়ীও এটা প্রায় ৮ কিলোমিটার কম । কিন্তু এই রাস্তার প্রধান সমস্যা হল এটা জনবহুল, কিছু জায়গায় ভাঙাচোরা এবং উস্থি বাজারের কাছে বিশেষ যানজটসঙ্কুল । এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে ডায়মন্ড হারবার পড়ে না । প্রায় ১৮ কিলোমিটার চলার পর এই রাস্তা আবার রাজ্যসড়ক ১২ এর সঙ্গে মিলিত হয়, সেখান থেকে রাস্তা আবার সুন্দর । আমরা যাওয়ার সময়ে এই রাস্তা দিয়ে গেলেও ফেরার পথে ডায়মন্ড হারবার হয়েই ফিরেছি ।
নামখানা ব্রীজ থেকে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী |
বক্খালির পার্কিং এরিয়া |
বক্খালির সমুদ্রে স্নান |
পার্কিং লটের লাগোয়া স্নানাগারে দ্বিতীয়বার চান করে একটা হোটেলে ঢুকলাম । এই এলাকায় অনেকগুলো ভাতের হোটেল আছে, খাবার মান আর দাম প্রায় সবগুলোতেই এক । হোটেলে স্যানিটাইজেশনের বিরাট কিছু ব্যবস্থা নেই - ঐ স্যানিটাইজার দিয়ে টেবিল মোছা ছাড়া আর আমাদের হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করা ছাড়া । তবে একটা তথ্য জানলাম যে বক্খালিতে সেভাবে করোনার প্রকোপ ছড়ায়নি । ফাঁকা জায়গা আর লোকজন কম হওয়াটাই এইসব জায়গার বাড়তি সুবিধা । আমরা ইলিশ থালি অর্ডার দিলাম । ইলিশের পিস্টা মাঝারি আর স্বাদ বেশ ভালো । থালির দাম মাথাপিছু ১৮০/- টাকা ।
বক্খালির বিচ্ |
আগেই ঠিক ছিল ফেরার পথে ডায়মন্ড হারবার হয়ে ফিরব । ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার কাছাকাছি আসার আগেই একটা মাছের বাজার পড়ে, যেখানে নানা জাতের নানা সাইজের মাছ দেখে বেশ লোভ লাগে । এখান থেকে কলকাতা ও শহরতলীর একটা বিরাট অংশের মাছের সরবরাহ হয় আর সেটা এখানকার মাছের সম্ভার দেখে সহজেই অনুমান করা যায় । এই মাছের ভিড়ে ইলিশ মাছও আছে, তবে নিয়ে আসার সুবিধে হবে না বলে আমরা আর গাড়ি থেকে নেমে দরদাম করলাম না । সোজা ডায়মন্ড হারবারের নদীর ধারে এসে দাঁড়ালাম ।
ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার ওপরে সূর্য্যাস্ত |
মিনিট কুড়ি বসার পরে আবার রওনা দিলাম । বাড়ি পৌঁছতে রাত আটটার কিছু বেশি হল । শেষ হল অতিমারী আবহে একটা ছোট্ট কিন্তু অসাধারণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা !
সারসংক্ষেপ ঃ
১. কলকাতার সবথেকে নিকটবর্তী সমুদ্র বিচ্ হল বক্খালি । কলকাতা থেকে বক্খালির দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটারের মতো আর যেতে চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা মতো লাগে ।
২. বক্খালিতে ডে-আউট করা যায় আবার চাইলে রাতে থাকাও যেতে পারে । পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের হোটেল ছাড়াও এখানে প্রচুর ছোটবড় বেসরকারী হোটেল আছে ।
৩. বক্খালিতে একরাতের বেশি থাকার মানে হয় না, তবে এখান থেকে আরও কয়েকটা জায়গা ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে । সেই জায়গাগুলোর মধ্যে হেনরি আইল্যান্ড, জম্বুদ্বীপ, সাগরদ্বীপ এগুলো উল্লেখযোগ্য ।
৪. বক্খালি বিচের কাছেই বেশ বড় গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা আছে । এখানে একটা স্নানাগারও আছে যেটা দারুণ কিছু না হলেও কাজ চালানোর পক্ষে যথেষ্ট ।
৫. পার্কিং-এর জায়গা থেকে বিচ্ হেঁটে ৩০০ মিটারের মতো । এই যাওয়ার পথে একাধিক ভাতের হোটেল, নানারকম জিনিসপত্রের দোকান ইত্যাদি আছে ।
৬. বক্খালির বিচ্সংলগ্ন ভাতের হোটেলের খাবারের মান ও দাম প্রায় একইরকম । একটু উন্নতমানের হোটেল চাইলে বিচ্ থেকে কিছুটা ভিতরের দিকে আসতে হবে ।
৭. গাড়ি নিয়ে গেলে বক্খালি যাওয়া বা ফেরার পথে ডায়মন্ড হারবার হয়েই যাতায়াত করা শ্রেয় । ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার ওপর সূর্য্যাস্তের দৃশ্য একটা অতিরিক্ত পাওনা ।
উপসংহার ঃ
বক্খালি |
বক্খালি ভ্রমণের আরও ছবি দেখতে হলে click here.