আমি ব্লগ লেখার খুব বেশি সমর্থক কোনওদিনও ছিলাম না, সত্যি কথা বলতে কি এখনও যে আছি তা নয় । তার একটা প্রধান কারণ আমার ধারণা ব্লগ লেখার থেকেও পড়া অনেক বেশি ক্লান্তিকর । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময়ই পড়তে শুরু করে শেষ করা হয়ে ওঠে না । নিজের ধৈর্য এবং/অথবা আগ্রহের অভাবকে 'ঠিক আছে, বাকিটা পরে পড়ব' জাতীয় অজুহাত দিয়ে ঢেকে দিই - আর আমরা সবাই জানি সেই 'পরে' টা আর কখনওই আসে না । তো, এই কারণে আমি ঠিক করেছি আমার ব্লগকে কখনওই অন্যের ক্লান্তির কারণ ঘটাব না, আমার ব্লগের বিষয় হবে প্রধানতঃ ভ্রমণ । আমার মতো যেসব বাঙালিরা ঘুরতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ব্লগ হবে তথ্যের একটা উৎস । আমার নিজের একটা অভ্যেস আছে, কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গাটা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি, আর ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে আমার বরাবরই মনে হয়েছে যে ইন্টারনেটে লেখালেখি করার ব্যাপারে বাঙালিদের থেকে কুঁড়ে খুব কম শিক্ষিত জাতই আছে । আমার মতো যেসব বাঙালিরা আছে, যারা ইন্টারনেটে কোনো একটা ইংরিজীতে লেখা দেখলেই না পড়ার চেষ্টা করে, তাদের জন্য আমার ব্লগ সহায়ক হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে শুরু করছি আমার ভ্রমণকাহিনী । আগেই বলে রাখি, আমি স্ট্যাটিসটিক্সের ছাত্র ছিলাম, তাই আমার ব্লগে তত্ত্বের থেকে তথ্যের দেখাই মিলবে বেশি ।

Friday, May 31, 2019

মহিষাদল রাজবাড়ি ভ্রমণ

এ'কথা অনস্বীকার্য্য যে নির্ঝঞ্ঝাট সুষ্ঠু ভ্রমণের জন্য নিখুঁত পরিকল্পনার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে । আবার সেইসঙ্গে এটাও ঠিক যে কোনও কোনও ভ্রমণের মাধুর্য্য তার পরিকল্পনাহীনতায় । সেক্ষেত্রে একমাত্র সম্বল বেরিয়ে পড়ার একটা অদম্য ইচ্ছে । কিন্তু পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিকতা ইত্যাদি কয়েকটা শব্দ আমাদের জীবনে থাকেই, ফলে সেই বিধিনিষেধের বেড়াজালের বাইরে বেরোনো সমীচীনও নয়, অভিপ্রেতও নয় । যদি একান্তই বেরোতে হয়, ফেরার পথও খোলা রাখতে হয় । এই অবস্থায় 'ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া' যতদূর যাওয়া সম্ভব, ততদূর যাওয়াই অনুমোদনযোগ্য যাতে সন্ধ্যের আগে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসতে পারে ! এই কথাগুলো মাথায় রেখেই আমাদের এবারের ভ্রমণস্থল 'মহিষাদল রাজবাড়ি' । কলকাতা থেকে দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার - গাড়িতে ঘন্টা তিনেক ।

(আগের প্যারাগ্রাফের ভাষাটা আমার স্বাভাবিক ভাষা নয় । ঠিক যেরকম পরিকল্পনাবিহীন ভ্রমণও আমার স্বাভাবিক ভ্রমণ নয় । ওই ভাষা আর এই ভ্রমণ দু'টোরই অভিসন্ধি এক - স্বাদবদল ! যদি খটোমটো লাগে বা বুঝতে অসুবিধে হয়, দ্বিতীয়বার পড়ার দরকার নেই । ওই প্যারাগ্রাফে এমন কোনও দরকারী তথ্য নেই যেটা না পড়লে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে !)

শুক্রবার ৩১শে মে, ২০১৯ - সকাল দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোলাম আমি আর অমৃতা । কোনও পরিকল্পনা ছিল না, উদ্দেশ্য লঙ ড্রাইভে যাওয়া । তবে মহিষাদল রাজবাড়ি যাওয়া যেতে পারে, এরকম ভেবে রেখেছিলাম । জায়গাটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদীয়া মহকুমার মধ্যে পড়ে এটা জানা ছিল, কিন্তু কোলাঘাটের পরে আর রাস্তা চিনতাম না । ভরসা গুগ্‌ল ম্যাপ । কোলাঘাট - মেচেদা পেরিয়ে ১১৬ নং জাতীয় সড়ক ধরে ২৭ কিলোমিটার মতো গেলে নন্দকুমার-এর মোড় । এখানে আমরা একটা বিরিয়ানির হোটেল থেকে লাঞ্চ সেরে নিলাম । বীফ্‌ বিরিয়ানি আর বীফ্‌ ভুনা । খরচ হল ১৬০/- টাকা । নন্দকুমার থেকে বাঁদিকে ঘুরে ৪ নং রাজ্যসড়ক হয়ে ৮ কিলোমিটার গেলে মহিষাদল রাজবাড়ি । আমরা পৌঁছলাম তখন দুপুর ১ঃ১৫ মিনিট ।

মহিষাদল রাজবাড়ির প্রধান প্রবেশপথ
মেইন গেটের বাইরে গাড়ি পার্কিং করে আমরা ভিতরে ঢুকলাম । এখানে ঢোকার টিকিট লাগে, মাথাপিছু ১০/- টাকা । ভিতরে একটা বিশাল জমির ওপর প্রকান্ড রাজবাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে । চন্দ্রকেতুগড়ের মতো এখানেও ঢোকার আগে জায়গাটা সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে রাখি । এই তথ্যের সূত্র মহিষাদল রাজবাড়ির দেওয়ালে লাগানো একটি সূচনা ।



মহিষাদল রাজপরিবারের বংশতালিকা
ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে উত্তর প্রদেশ থেকে জনার্দন উপাধ্যায় এই অঞ্চলে বাণিজ্য করতে এসে এখানে একটি জমিদারী কিনে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন । এই জনার্দন উপাধ্যায়ই মহিষাদল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি মোঘল সম্রাট আকবরের সনন্দমূলে মহিষাদলাধিপতির স্বীকৃতি পান । পরবর্তীকালে জনার্দন উপাধ্যায়ের বংশধর মন্থরা দেবীর পুত্র গুরুপ্রসাদ গর্গ এই রাজবংশের রাজা হন । এই সময় থেকেই এই রাজবংশ উপাধ্যায়দের জায়গায় গর্গদের নামে হয়ে যায় । ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত্য এই গর্গ বংশ এখানকার রাজা ছিলেন । বর্তমানে এই বংশের বংশধররা কলকাতায় থাকেন এবং ব্যবসাবাণিজ্য করেন ।

এই রাজপরিবার এই অঞ্চলে বহু জনহিতকর কাজকর্ম করেছে । বিভিন্ন সময়ে এঁরা মোট তিনটি রাজবাড়ি তৈরি করেন । এগুলোর মধ্যে একটা অবলুপ্ত হয়ে গেছে, দ্বিতীয় 'রঙ্গীবসান রাজবাটী' নবাবদের আমলে তৈরি হয় । এটির অবস্থাও বর্তমানে খুব একটা ভালো নয় । তৃতীয় 'ফুলবাগ রাজবাটী' ইংরেজ আমলে তৈরি হয় আর এটাই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত । এই রাজবাড়িতেই গর্গ পরিবার মহিষাদল রাজবাড়ির সংগ্রহশালাটি তৈরি করেছে ।

রাজবাড়িতে ঢোকার দরজা
ফটক দিয়ে ঢুকে আমরা প্রথমে গেলাম মূল বাড়িটাতে । বাড়ির ভিতরে জুতো খুলে ঢুকতে হয় । এগারো ধাপ সিঁড়ি উঠে (এটা তখন গুনিনি, পরে ছবি দেখে গুনেছি) বাড়ির ভিতরে ঢুকে সামনেই যে সুবিশাল হলঘরটা রয়েছে, সেটা যে এককালে বৈঠকখানা ছিল সে আর বলে দিতে হয় না । এই বৈঠকখানা ঘরের মধ্যে সোফা, শ্বেতপাথরের টেবিল, আলমারি ইত্যাদি অনেক আসবাবপত্র রয়েছে । উপাধ্যায় তথা গর্গ রাজবংশের অবস্থা যে বেশ উঁচুদরের ছিল, সেটা এখান থেকে ভালোই বোঝা যায় । এই ঘরের সামনে একজন ভদ্রলোক বসেছিলেন, যিনি বোধহয় এখানকার কেয়ারটেকার । ঢোকার সময়েই আমাদের বললেন সব ঘরের ভিতরেই ফোটো তোলা বারণ, তাই আমরা এখানে কোনও ছবি তুলিনি ।

বৈঠকখানা ঘর থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে গেলে বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে যে ঘরটা রয়েছে সেটাকে লাইব্রেরী ঘর বলা চলে । ঘরটা বিরাট বড় না হলেও এখানে বেশ কয়েকটা আলমারি রয়েছে আর সেগুলোয় বই ঠাসা । এর মধ্যে কোনও দুষ্প্রাপ্য বই আছে কিনা জানি না, তবে বইগুলো যে সযত্নেরক্ষিত সে'কথা বলা চলে না । হয়তো নিয়মিত ঝাড়পোঁছ করা হয়, কিন্তু সজ্জিতকরণের অভাব । এখানে আমাদের চেনাজানা কয়েকটা বইও দেখতে পেলাম ।

লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে পুবদিকের বারান্দা দিয়ে গেলে প্রথমে শিকারের ঘর । এখানে বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন ধরনের অনেকগুলো বন্দুক, রাইফেল, রিভলভার, পিস্তল ইত্যাদি রাখা রয়েছে । এর পাশের একটা ঘরে শিকার করা জানোয়ারদের মাথা, দেহ ইত্যাদি স্টাফ করে রাখা আছে । সেখান থেকে বেরোলে আরেকটা ঘরে একগাদা বাদ্যযন্ত্র রাখা আছে । সবমিলিয়ে দেখে বোঝা যায় যেকোনও বড় রাজপরিবারের মতো মহিষাদল রাজবাড়িতেও বিভিন্ন সময়ে সঙ্গীত, শিকার ইত্যাদির বিশেষ প্রচলন ছিল ।

বাড়ির পিছন দিকে একটা অপেক্ষাকৃত চওড়া বারান্দা । সেখানে একটা বিশাল শ্বেতপাথরের গোল টেবিল আর তার চারদিকে চারটে চেয়ার । চাইলে এখানে কিছুক্ষণ বসাও যেত, কিন্তু দু'টো চেয়ারে দু'জন লোক বসেছিল (বোধহয় বাড়ির দেখাশোনা করে), তাই আর বসলাম না । এনাদের জিজ্ঞেস করলাম দোতলায় দেখার কিছু আছে কিনা । উত্তরে জানলাম দোতলাটা সাধারণ লোককে দেখতে দেওয়া হয়না কারণ সেখানে বাসযোগ্য ঘর আছে আর গর্গ পরিবারের লোকজন এখানে এলে ঐ ঘরগুলোতেই থাকেন । একতলায় উত্তরপূর্ব কোণে একটা শোওয়ার ঘর আছে, আমরা সেটায় ঢুকলাম ।

ঘরটা বেশ বড়, প্রায় মাঝখানে একটা ছত্রিবিশিষ্ট খাট । খাটটা মেঝে থেকে বেশ কিছুটা উঁচু বলে ওঠার জন্য একটা রেলিংবিশিষ্ট কাঠের সিঁড়ি রয়েছে । বড় খাটটা ছাড়াও দেওয়ালের পাশে আরেকটা ছোট খাট আছে যেটা সম্ভবতঃ বাচ্চা শোওয়ানোর জন্য ব্যবহার হত । এছাড়া ঘরে একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা আলমারি, একটা পিয়ানো ইত্যাদি রয়েছে ।

বারান্দায় রাখা পালকি
ঘর থেকে বেরিয়ে আমরা আবার বাড়ির সামনের দিকে চলে এলাম । আগেই দেখেছিলাম সামনের বারান্দায় একটা পালকি রাখা রয়েছে । এখানে ছবি তোলার কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই বলে এটার ছবি তুললাম ।







মহিষাদল রাজবাড়ির একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য অংশ হল বাড়ির সামনের বিশাল গোলাকৃতি বাগান । এখানে বেশ কিছু চেয়ার, বেঞ্চি ইত্যাদি রাখা রয়েছে । মে মাসের দুপুরে গরম যথেষ্ট, কিন্তু সেটা এখানে ততটাও লাগছিল না কারণ দিগন্তবিস্তৃত মাঠের ওপর দিয়ে খুব মনোরম হাওয়া দিচ্ছিল । বেশ বুঝতে পারছিলাম গরমকালে সন্ধ্যেবেলা আর শীতকালের দুপুরবেলা এখানে বসে থাকতে দিব্যি লাগবে । এই গোল বাগানটাকে ঘিরে আবার একটা ফুলের বাগান, সেখানে একাধিক গাছপালা রয়েছে । দেখে বোঝা যায় বাগানটার বেশ ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় ।

সতীপ্রসাদ গর্গের মূর্তি
বাড়ির দক্ষিণ দিকে মাঠের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলা পথে কিছুটা গেলে একটা শ্বেতপাথরের মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়, সেটা রাজা সতীপ্রসাদ গর্গের । ১৯১৩ সালে ইনি ব্রিটীশ সরকারের কাছ থেকে 'রাজাবাহাদুর' খেতাব পান । মূর্তির নিচের ফলক থেকে জানলাম গর্গমশাই ২৭শে ডিসেম্বর ১৮৮২ থেকে ১৯শে মার্চ ১৯২৬ পর্যন্ত্য বেঁচেছিলেন ।











গোপাল জেউ মন্দির
আমাদের ফুলবাগ রাজবাটী দেখা শেষ, তাই আমরা হাঁটা লাগালাম রঙ্গীবসান রাজবাটীর দিকে । দুপুরবেলা পুরো এলাকায় বিশেষ লোকজন নেই, তাই খুঁজে পেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছিল । একজন আইসক্রিমওয়ালার থেকে পথের হদিস জানতে পারলাম (হ্যাঁ, সেইসঙ্গে ম্যাঙ্গো স্টিক আইসক্রিমও খেলাম !)। হেঁটে যাওয়ার পথটা বেশ সুন্দর, একটা পুকুর, আমবাগান ইত্যাদি দেখা যায় । একেবারে গ্রাম আর কি ! যাওয়ার পথে একটা মন্দির পড়ে, সেটার নাম গোপাল জিউ মন্দির । মন্দিরের আদলটা একেবারে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর মন্দিরের মতো । দুপুরবেলা মন্দিরের গেট বন্ধ, তাই বাইরে থেকে দেখেই খুশি থাকতে হল ।


পুরনো রাজবাড়ির সিংহদুয়ার
মন্দিরের সামনের রাস্তা ধরে আরও মিনিট তিনেক হাঁটলে পুরনো রাজবাড়িটা দেখতে পাওয়া যায় । বাড়ির চারদিকে লোহার ভারা আর টিনের পাঁচিল - দেখেই বোঝা যায় সংস্কারের কাজ চলছে । বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে গেলে বাড়ির প্রধান ফটক বা সিংহদুয়ার । এটার উপরের তলায় লোকজন থাকে । আমরা সিংহদুয়ার দিয়ে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আবার ফুলবাগ রাজবাড়ির দিকে চলে এলাম কারণ আমাদের গাড়ি ওখানেই রাখা আছে ।

হেঁটে আসার পথে একটা ঘটনা ঘটল যেটা আমাদের দু'জনকেই খুব আপ্লুত করল । একজন ভদ্রলোক বরফ দেওয়া লেবুর সরবৎ বিক্রি করছিলেন । গরমের দুপুরের ঘন্টাদেড়েক হাঁটাহাঁটি করার পর এর থেকে উপাদেয় জিনিস আর হয়ই না । আমরা একগ্লাস করে খাওয়ার পরে তিনি নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন আমরা কোথা থেকে আসছি ইত্যাদি । তারপর ওনার ঝোলা থেকে একটা পাকা আম বের করে আমাদের দিলেন । এটা এখানকার আমবাগানের আম, অনুরোধ করলেন আমরা যেন বাড়ি গিয়ে সেটা খাই । ভদ্রলোককে বিদায় জানিয়ে আমরা চলে এলাম । এই আন্তরিকতা সচরাচর শহরাঞ্চলের অপরিচিত মানুষের মধ্যে দেখা যায় না, সেই বিষয়ে আমরা দু'জনেই একমত ।

এবার ফেরার পথ ধরলাম । যেপথে গিয়েছিলাম, আবার সেই পথেই ফিরে এলাম । ফেরার পথে আর কোথাও দাঁড়াইনি । সন্ধ্যে ছটার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেলাম !

সারসংক্ষেপঃ

১. কলকাতা থেকে ডে-আউট ট্রিপে ঘোরার জন্য অন্যতম অপ্শ‌ন্‌ হল মহিষাদল রাজবাড়ি । পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদীয়া মহকুমার মধ্যে অবস্থিত এই রাজবাড়ি দেখার জায়গা হিসেবে বেশ সুন্দর ।
২. কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে মহিষাদল যেতে ঘন্টাতিনেক লাগে । এছাড়া হাওড়া স্টেশন থেকে হলদীয়া লোক্যালে সতীশ সামন্ত হল্ট স্টেশনে নেমেও এখানে যাওয়া যায় । স্টেশন থেকে টোটো বা রিক্সায় মহিষাদল রাজবাড়ি যেতে মিনিট পনেরো লাগে ।
৩. বর্তমানের প্রধান রাজবাড়িটা হচ্ছে সংগ্রহশালা । এখানে বিভিন্ন ঘরে বিভিন্ন দেখার জিনিস আছে ।
৪. মূল রাজবাড়ির কাছে একটা পুরনো রাজবাড়ি আছে যেটা বর্তমানে সংস্কার চলছে । সংস্কার হয়ে গেলে এটাও হয়তো একটা দেখার জায়গা হবে ।
৫. দুই রাজবাড়ির মাঝে একটা গোপালের মন্দির আছে । মন্দিরটা দুপুরবেলা বন্ধ থাকে, তাই বিকেলের দিকে গেলে মন্দির খোলা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে ।
৬. এখানে বছরের যেকোনও সময়েই যাওয়া যেতে পারে তবে বর্ষাকালটা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো । রাস্তাঘাট অনেকাংশেই মাটির, তাই বর্ষাকালে চলাচলের পক্ষে অনুকূল নাও থাকতে পারে ।
৭. রাজবাড়ির একেবারে কাছে কোনও দোকানপাট নেই । তবে মহিষাদল বাজার বা কলেজ এলাকায় বেশি কিছু দোকানপাট এবং সেইসঙ্গে খাবারের দোকান আছে ।

উপসংহারঃ

মহিষাদল রাজবাড়ি
রাজতন্ত্র জিনিসটা আমাকে চিরকালই বেশ আকর্ষণ করে । ইংরেজ আমল শুরু হওয়ার আগে প্রধানতঃ জমিদারদেরই রাজা বলা হত, এই মহিষাদল রাজবাড়ি সেরকমই একটা রাজবাড়ি । ব্রিটীশরা রাজাদের ক্ষমতা অনেকটাই কেড়ে নিলেও প্রজাবৎসল ভালো রাজার প্রতি প্রজাদের আনুগত্য তাতে কমেনি । আমরা এই রাজবংশের ইতিহাস যতটা জানতে পেরেছি, সেটা এঁদের নিজেদেরই প্রকাশ করা তাই তার থেকে কয়েনের ও'পিঠের ছবিটা দেখতে পাওয়া সম্ভব নয় । সত্যি বলতে কি, না পেলে বিশেষ কিছু আসে যায়ও না । রাজা নেই, রাজতন্ত্রও নেই কাজেই সেই রাজা কেমন ছিলেন সে'প্রশ্ন অবান্তর । যেটা ভালো লাগল যে এই বংশের বংশধররা আজও চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই বংশের ইতিহাসকে ধরে রাখতে আর সেটা পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে । আর সেই চেষ্টায় প্রয়োজন পর্যটকদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ । বিশাল কিছু দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা নয়, প্রয়োজন আমাদের খুব কাছে অবস্থিত প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো রাজপরিবারের কীর্তিকলাপ নিজের চোখে দেখার ইচ্ছে । আছে ? তাহলে আরে কি, বেরিয়ে পড়তে হবে !

মহিষাদল রাজবাড়ি ভ্রমণের আরও ছবি দেখতে হলে click here.